পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আর্ত্তত্রাণ।
৩৭৫

 এই খৃষ্টাব্দে কলিকাতার সিমলা অঞ্চলে একটী বিধবাবিবাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বর-কন্যা উভয়েই ব্রাহ্মণ। ইহার পর অন্যান্য স্থানে আরও কতকগুলি বিধবা-বিবাহ হইয়াছিল।

 পুস্তক-বিক্রয়ে ও ছাপাখানার কাজে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আয় অনেকটা বাড়িয়াছিল বটে; কিন্তু বিধবা বিবাহের ব্যয়ে ও অন্যান্য বহুবিধ দান-ব্যাপারে তাঁহার ঋণও বিলক্ষণ হইয়াছিল। কখনও কেহ তাঁহার নিকটে হাত পাতিয়া তো বিমুখ হইত না। বিপন্ন ও শরণাগত জন সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইলে বিদ্যাসাগর স্থির থাকিতে পারিতেন না। হস্তে এক কপর্দ্দক নাই; কিন্তু দশ হাজার টাকা দিয়া এক জন বিপন্নকে রক্ষা করিতে হইবে। অর্থ নাই; কিন্তু বিপন্নের জন্য প্রাণ ব্যাকুল। সে বাকুলতা হৃদয়হীন আমরা কি বুঝব বল? সে ব্যাকুলতার বেগরোধ করা বিদ্যাসাগরেব অসাধ্য হইত। কাজেই ঋণ ভিন্ন উপায়ান্তর ছিল না। ঋণ করিয়া দুঃখীর দুঃখমোচন করা বিদ্যাসাগরের বাল্যাবস্থা হইতে অভ্যস্ত। যখন তিনি কলেজে পড়িতেন, তখন কাহারও বস্ত্রাভাব বা অন্নাভাবের কথা শুনিলে, তিনি দ্বারবানের

    পত্রে লিখিয়াছিলেন,—“আমার পিতৃদেব গোপীনাথ রায় চুড়ামণি মহাশয় বলিয়াছিলেন,—তিনি (রমাপ্রসাদ) বিদ্যাসাগর মহাশয়কে কহিয়াছিলেন, “আমার পিতা সমাজসংস্কারের কসুর করেন নাই। তাতে তো কোনও ফল ফলে নাই। অতএব আর চেষ্টা পাওয়া বৃথা।” এই বলিয়া বিধবাবিবাহের সভায় যাইতে তিনি অস্বীকৃত হন। বিদ্যাসাগর ও রমাপ্রসাদ বাবুর কথোপকথন সময়ে বাবু প্রসন্নকুমার সর্ব্বাধিকারী, পণ্ডিত কালিদাস তর্কসিদ্ধান্ত প্রভৃতি অন্যান্য অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁহাদের নিকটেই এই কথা শুনিয়া আসিতেছিলাম।”