পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অযাচিত দান।
৩৮৭

একটী ব্রাহ্মণ গঙ্গাস্নান করিয়া অতি বিষণ্ন ভাবে তাঁহার সম্মুখ দিয়া যাইতেছিলেন। ব্রাহ্মণের চক্ষে জল পড়িতেছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহাকে ডাকিয়া বলিলেন,—“আপনি কাঁদিতেছেন কেন?” বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চটি জুতা ও মোটা চাদর দেখিয়া, সামান্য লোক বোধে ব্রাহ্মণের কোন কথাই বলিতে প্রবৃত্তি হয় নাই। কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পীড়াপীড়িতে তিনি বলেন,—“আমি এক ব্যক্তির নিকট হইতে টাকা ধার করিয়া কন্যাদায় হইতে উদ্ধার লাভ করিয়াছি। কিন্তু সে টাকা পরিশোধ করিতে অক্ষম। ঋণদাতা আদালতে আমার নামে নালিশ করিয়াছে।” ব্রাহ্মণকে বিদ্যাসাগর মহাশয় জিজ্ঞাসিলেন,—“মোকদ্দমা কবে?” ব্রাহ্মণ বলিলেন,—“পরশ্ব।” ক্রমে ক্রমে বিদ্যাসাগর মহাশয় মোকদ্দমার নম্বর, ব্রাহ্মণের নাম, ধাম প্রভৃতি একে একে সব জানিয়া লইলেন। ব্রাহ্মণ চলিয়া গেলে পর তিনি সঙ্গী বন্ধুটীকে মোকদ্দমার প্রকৃত তথ্য অবগত হইতে বলেন। তথ্যানুসন্ধানে ঠিক হয়, ব্রাহ্মণের কথা সত্য বটে; দেনা তাঁর সুদে আসলে ২৪০০৲ টাকা। বিদ্যাসাগর মহাশয় ২৪০০৲ টাকাই আদালতে জমা দেন।[১] তিনি আদালতের উকিল-আমলাকে বলিয়া রাখেন,—“আমার নাম যেন প্রকাশ না পায়; নাম প্রকাশের জন্য ব্রাহ্মণ যে পুরস্কার দিতে প্রস্তুত হইবে, আমি তাহা দিব।” ব্রাহ্মণ মোকদ্দমার দিন আদালতে উপস্থিত হইয়া বুঝিলেন,

  1. এ দান-বিবরণটী আমরা ভট্টপল্লীর খ্যাতনামা পণ্ডিতমহাশয় শ্রীযুক্ত পঞ্চানন তর্করত্ন মহাশয়ের মুখে শুনিয়াছি।