পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্নসত্র।
৪২১

সিধা পাইত। কেহ পুত্রকন্যা ফেলিয়া স্থানান্তরে চলিয়া গেলে, তাহার পুত্রকন্যার রক্ষণাবেক্ষণের ভার বিদ্যাসাগর মহাশয় লইতেন। গর্ভবতী স্ত্রীলোক প্রসব করিলে, তাহার নবজাত শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রতিপালনের জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয় সুবন্দোবস্ত করিয়া দিতেন।

 যখন কাঙ্গালীরা খাইতে বসিত, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জয়জয়কার ধ্বনিতে গগনমেদিনী পূর্ণ হইয়া যাইত। সেই সময় মনে হইত, অনন্ত মরুভূমে যেন শতধারে মন্দাকিনীর স্রোত ছুটিতেছে; এবং সকলের বিষাদক্লিষ্ট মুখমণ্ডলে যেন প্রীতি প্রফুল্লতার এক পবিত্র জ্যোতি নিঃসারিত হইতেছে।

 সকলে প্রত্যহ খেচরান্ন পাইত। প্রত্যেক সপ্তাহে এক দিন করিয়া ভাত, মৎস্যের ঝোল ও দধির ব্যবস্থা ছিল। অনেক সময় বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বয়ং অনেক রুক্ষ্মকেশ দীনহীন মলিন স্ত্রীলোককে তৈল মাখাইয়া দিতেন। যে সব ভদ্রলোক সিধা লইতে কুণ্ঠিত হইতেন, বিদ্যাসাগর মহাশয় গোপনে তাঁহাদিগকে টাকা দিতেন। অনেক ভদ্র মহিলাকে তিনি গোপনে কাপড় বিতরণ করিয়া আসিতেন। অন্নসত্রে রোগীর চিকিৎসা চলিত, মৃতের সৎকার হইত।

 ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অন্নসত্রের কাজ চলিয়াছিল। অন্নসত্রের আবশ্যকতা তিরোহিত হইলে, বিদ্যাসাগর মহাশয় পাচক, পরিচারক প্রভৃতি কর্ম্মচারিবর্গকে যথারীতি বেতনাদি দিয়া বিদায় দেন। অন্নকষ্টের অবসানের পরও গ্রামের যে সব লোকের কষ্ট ছিল, তাহাদিগকে তিনি মাসিক কিছু কিছু সাহায্য করিবার ভার জননীর উপর অর্পণ করিয়াছিলেন।