পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দারুণ-দুর্ঘটনা।
৪৩৩

মহাশয় তখনই পড়িয়া অজ্ঞান হইয়া যান। তাঁহার যকৃতে দারুণ আঘাত লাগিয়াছিল। চারি দিক লোকে লোকারণ্য হইয়াছিল। মিস্ কারপেণ্টার তাঁহাকে বুকে তুলিয়া, আপন রুমাল ছিঁড়িয়া, ক্ষত স্থানে বাঁধিয়া দিয়াছিলেন। তাঁহার ও উড্রো সাহেবের শুশ্রূষায় বিদ্যাসাগর মহাশয় চৈতন্য লাভ করেন। পরে তিনি চৈতন্য লাভ করিয়া অনেক কষ্টে কলিকাতার কর্ণওয়ালিস্ ষ্ট্রীটস্থ বাসায় ফিরিয়া আসেন। এই দৈব-দুর্ঘটনার কথা শুনিয়া, তাঁহার বন্ধু-বান্ধব তাঁহাকে দেখিতে যান। পরম বন্ধু রাজকৃষ্ণ বাবু তাঁহাকে তুলিয়া লইয়া গিয়া সুকিয়া স্ট্রীটে নিজের বাটীতে লইয়া যান। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার তাঁহার চিকিৎসা করেন। ভয়ানক আঘাতে উরুদেশ ফুলিয়া উঠিয়াছিল। মাসের সুচিকিৎসায় তিনি এক রকম সারিয়া উঠেন; কিন্তু যে কালরোগে তাঁহার জীবনলীলার অবসান হয়, তাহার অঙ্কুরোৎপত্তি এই খানে। চিকিৎসকেরা বলেন, তাঁহার যকৃৎ উলটাইয়া গিয়াছিল। এই সময় হইতে তাঁহার স্বাস্থ্যভঙ্গ হইল। ইহার পর তাঁহাকে প্রায়ই শিরঃপীড়া ও উদরাময় রোগ ভোগ করিতে হইত। পরিপাক শক্তি হ্রাস হইয়া যায়। সুতরাং আহারও লঘু হইয়া পড়ে। দুগ্ধ সহ্য হইত না। প্রাতে মাছের ঝোল, ভাত এবং রাত্রিকালে বারলির রুটি, কখন কখন গরম লুচিমাত্র আহার ছিল। পরে তাহাও অসহ্য হইয়াছিল। অনেক সময় তিনি রাত্রিকালে দুই এক গাল মুড়ি খাইয়া থাকিতেন। তিনি প্রায়ই বলিতেন,—“বাল্যে পয়সার অভাবে দুগ্ধ খাই নাই; বয়সেও রোগের জ্বালায় তাহা হয় নাই।” বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্বমুখে শুনি-