পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৮
বিদ্যাসাগর।

গণের নিকট অতি সংগোপনে আপন অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন।” ৪৯ পৃষ্ঠা।

 কি মনোমোহিনী ভাষা। কি তেজস্বিনী-স্রোতময়ী লিপিভঙ্গী! কি অব্যাহত-গতি ভাব-ব্যক্তি! আজই যেন ভাষার স্রোত ভিন্নমুখীন; কিন্তু একদিন বঙ্গে বিদ্যাসাগরের ভাষারই আদর হইয়াছিল। পুস্তক লিখিতে হইলে, এই ভাষারই অনুকরণ হইত। টেকচাঁদ ঠাকুর (পারীচাঁদ মিত্র) মহাশয়, সরল গ্রাম্য ভাষায় পুস্তক লিখিয়া, ভাষার স্রোত ফিরাইয়া দিয়াছিলেন। কিন্তু লিখিত ভাষায়, তাঁহার প্রচলিত সে সরল গ্রাম্যশব্দপূর্ণ ভাষা স্থায়ী হইল না। বঙ্গের প্রতিভাশালী লেখক বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালা ভাষার নূতন মূর্ত্তির প্রকটন করেন। মূর্ত্তি বিদ্যাসাগর ও টেকচাঁদের ভাষার সংমিশ্রণে সংগঠিত। চুণ ও হলুদ স্বতন্ত্র পদার্থ; কিন্তু উভয়ে মিশিয়া এক নূতন পদার্থ হইয়া দাঁড়ায়। বিদ্যাসাগর ও টেকচাঁদ ঠাকুরের ভাষা মিশাইয়া বঙ্কিম বাবু যে নবীন ভাষার গঠনরাগ প্রস্তুত করিয়াছেন, তাহা এক নূতন পদার্থ হইয়া দাড়াইয়াছে। তাহাই এক্ষণে অধিকাংশ স্থলে অনুকৃত। বঙ্কিম বাবুর ছাঁচে ঢালিয়া, অথচ একটু নূতন করিয়া, ভাষা-সৃষ্টির প্রয়াস কোথাও কোথাও হইতেছে। ঠাকুর বাড়ীর ভাষা তাহার অন্যতম দৃষ্টান্ত।

 নারায়ণ বাবু বলেন,—“বাঙ্গালা ভাষা কিরূপ হওয়া উচিত, তৎসম্বন্ধে বঙ্কিম বাবু বিদ্যাসাগর মহাশয়কে পত্র লিখিয়াছিলেন। দুঃখের বিষয়, অনেক অনুসন্ধান করিয়াও সে পত্র পাওয়া যায় নাই।” যাহা হউক, এ সম্বন্ধে কোন মীমাংসা হয় নাই। বঙ্কিম বাবু স্বয়ং ভাষার স্বতন্ত্র পথের নির্দ্দেশ করেন। বিদ্যাসাগর মহা-