মহাশয়ের জীবিতাবস্থায় বঙ্কিম বাবু অনেক সময় বঙ্গদর্শনের লেখায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতি প্রকারান্তরে কঠোর কঠাক্ষবিক্ষেপ করিতেন। উত্তর-চরিতের সমালোচনায় তাহার আভাস পাওয়া যায়। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিজস্বহীনতার উল্লেখ করিয়া বঙ্গদর্শনে প্রকারান্তরে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ কটাক্ষও হইত। বঙ্গদর্শনে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পুস্তকগুলি আধুলি সিকির সহিত তুলিত হইয়া তাঁহার নিজস্বহীনতার প্রমাণ স্বরূপ হইয়াছিল।[১]
যেখানে যেরূপ হউক, যেভাবে যে প্রকারে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাষার আলোচনা হউক, ভাষা সম্বন্ধে কীর্তিমান্ গ্রন্থকারগণকে বিদ্যাসাগরের নিকট অল্পবিস্তর পরিমাণে ঋণী থাকিতে হইবে। বাঙ্গালা ভাষা কোন মূর্ত্তিতে দাঁড়াইবে, তাহার এখনও স্থিরনিশ্চয়তা নাই। বাঙ্গালা ভাষা যে মূর্ত্তিতে দাঁড়াক্ না কেন, মূর্ত্তি দেখিয়া, সর্ব্বাগ্রে বিদ্যাসাগরকে স্মরণ করিয়া অবনত মস্তকে সহস্রবার অভিবাদন করিতে হইবে। সে মূর্ত্তিতে বিদ্যাসাগরসৃষ্ট ভাষার সৌন্দর্য্য-বিলাসের ছায়ালোক মিশিয়া থাকিবেই থাকিবে।
বাঙ্গালা ভাষা সংস্কৃত হইতে অনুসৃত; সুতরাং বাঙ্গালা ভাষায় লিঙ্গাদিপ্রয়োগ সস্কৃতানুসারে হইয়া থাকে। আজ কাল অনেক স্থলে তাহার ব্যত্যয় হইতেছে। বঙ্কিম বাবু সংস্কৃতানুসারে লিঙ্গাদি প্রয়োগে দৃষ্টি রাখিতেন; অনেক স্থলে
- ↑ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের লোকান্তর হইবার পর, বঙ্কিম বাবু একখানি সমবেদনাসূচক পত্র লিখিয়াছিলেন। সে পত্রও পাওয়া যায় নাই। অতঃপর বঙ্গদর্শন হইতে প্রবন্ধ সংগ্রহ করিয়া বঙ্কিম বাবু যে পুস্তক প্রকাশ করেন, তাহাতে বিদ্যাসাগর মহাশয়সংক্রাত বক্রোক্তি পরিত্যক্ত হইয়াছে।