পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮৪
বিদ্যাসাগর।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় কাশী হইতে ফিরিয়া আসিয়া অসুস্থতা-নিবন্ধন কলিকাতা-কাশীপুরের গঙ্গাতীরে দেড় শত টাকার একটা বাড়ী ভাড়া লইয়া বাস করিতেছিলেন। এইখানে তিনি জননীর মৃত্যু-সংবাদ প্রাপ্ত হন। মাতৃভক্ত পুরুষ মাতৃহারা হইলেন। যে মাতৃ-আজ্ঞার পত্র পাইয়া মাতৃ-চরণ-দর্শনাকাঙ্খায় বিদ্যাসাগর প্রাণের মমতা বিসর্জ্জন দিয়া, দুস্তর দামোদরের খর-স্রোতে সাঁতার দিয়াছিলেন, সে মা আজ নাই! মাতৃভক্তের সে মর্ম্মান্তিক বেদনা কি বর্ণনীয়। তিনি কয়েক মাস বিষয়-কার্য্য পরিত্যাগ করিয়া নিভৃত নিলয়ে কেবল অশ্রু বিসৰ্জ্জন করিতেন। মাতার মৃত্যুর পর তিনি এক বৎসর হবিষ্যান্নাহারী হইয়াছিলেন। এই এক বৎসর কাল তিনি ছত্র, শয্যাসন প্রভৃতি বিলাসদ্রব্য ব্যবহার করিতেন না। পূর্ব্বে তিনি প্রায়ই কাশী যাইতেন। মাতার মৃত্যুর পর দুই বৎসর যান নাই। মাতৃশোকে জর্জ্জরিত হইয়াও কিন্তু তিনি পিতৃ-পাদপদ্ম বিস্মৃত হন নাই। পিতার সেবার্থ ভ্রাতা ও অন্য কোন আত্মীয়কে নিযুক্ত করিয়া পিতৃপ্রিয় দ্রব্যাদি এখান হইতে পাঠাইয়া দিতেন। কাশীর বাঙ্গালী ব্রাহ্মণদের প্রতি তাঁহার শ্রদ্ধা ছিল না। তাঁহারা কিছু পাইবার প্রত্যাশায় আসিলে প্রায়ই বিমুখ হইতেন। মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণদের প্রতি তাঁহার যথেষ্ট ভক্তি ছিল। কোন কার্য্যোপলক্ষে তিনি কাশীতে মহারাষ্ট্রী ব্রাহ্মণদিকেই ভোজন করাইতেন। এমন কি, তিনি স্বয়ং তাঁহাদের পাদ প্রক্ষালনাদি করিয়া দিতেন। কোন প্রকার ক্ষত পূঁজ দেখিয়াও ঘৃণা বোধ করিতেন না। কাশীতে যাইলে, পিতার অন্নব্যাঞ্জনাদি স্বহস্তে রন্ধন করিয়া দেওয়া এবং পিতার ভোজনাবশিষ্ট প্রসাদ গ্রহণ করা তাঁহার নিত্যক্রিয়া মধ্যে