পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পিতৃ-পরিচয়।
.২৫

বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তেজস্বিতা, স্বাধীনতা-প্রিয়তা, সত্যবাদি্তা ও সরলতা চির-প্রসিদ্ধ। তিনি এই সব গুণ পিতা ও পিতামহের নিকট হইতে প্রাপ্ত হইয়াছেন বলিয়া মনে হয়। পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ অসীম তেজস্বী পুরুষ ছিলেন। তিনি কাহারও মুখাপেক্ষা করিতেন না এবং পর-শ্রীকাতর ব্যক্তিবর্গের ভ্রভঙ্গীতে ভীত হইতেন না। তিনি এইরূপ স্বাধীন-প্রকৃতি লোক ছিলেন বলিযা তাঁহার শ্যালক ও তৎপক্ষীয় লোক তাঁহার বিপক্ষ ছিলেন। তাঁহার মতে দেশে মানুষ ছিল না, সবই গরু। তিনি যেমন সৎসাহসী, তেমনই নিরহঙ্কার ও সত্যবাদী ছিলেন। ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণের একটু শ্লেষাত্মক রসিকতার পরিচয় লউন। এক দিন তিনি গ্রামের পথ দিয়া যাইতেছিলেন; এক জন বলিল,—“ও পথ দিয়া যাইবেন না; বড় বিষ্ঠা।” ব্রাহ্মণ উত্তর করিলেন,—“বিষ্ঠা কৈ? সবই তো গোবর, এ দেশে মানুষ কৈ, সবই তো গরু।” কথিত আছে, তিনি যখন গৃহত্যাগ করিয়া তীর্থ পর্যটন করেন, তখন এক দিন রাত্রিকালে স্বপ্ন দেখেন,—“তোমার পরিবার তোমার জন্মস্থান বনমালিপুর পরিত্যাগ করিয়া বীরসিংহ গ্রামে বাস করিতেছে। তাহাদের এখন কষ্টের একশেষ।” ইঁহার পর তিনি বীরসিংহে প্রত্যাগমন করিয়া পুনরায় পরিবারবর্গের ভার গ্রহণ করেন।

 বীরসিংহ গ্রামের ভূস্বামী তাঁহাকে তাহার বাস্তুভিটার ভূমিটুকু নিষ্কর ব্রহ্মোত্তর করিয়া দিতে চাহেন এবং তাঁহার আত্মীয়-স্বজন তাঁহাকে তদগ্রহণার্থ অনুরোধ করেন। তেজস্বী রামজয়ের বিশ্বাস ছিল যে, নিষ্কর ভূমিতে বাস করিলে ভূস্বামী তাহার পুণ্যাংশ গ্রহণ করিবেন এবং তাঁহার অহঙ্কার বাড়িবে। এই জন্য তিনি নিষ্কর