পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাশীর কার্য্য।
৪৮৫

পরিগণিত হইত।[১] তিনি স্বয়ং বাজার করিয়া আনিতেন। মাতৃ-বিয়োগের পর ১৮৭৩ সালে নবেম্বর মাসে পিতার অত্যন্ত পীড়া হইয়াছে শুনিয়া, তিনি সকল কর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া, কাশী গিয়াছিলেন। তথায় এক পক্ষের মধ্যে পিতা সম্পূর্ণরূপ আরোগ্য লাভ করেন। পবিত্র কাশীধামে তিনি প্রত্যহ প্রাতঃকালে টাকা, আধুলী, সিকি লইয়া পদব্রজে বাহির হইতেন; এবং দীন-হীন দরিদ্র ব্যক্তিকে যথাসাধ্য বিতরণ করিতেন।

 এই সময়ে এক দিন এক ব্যক্তি তাঁহাদের বাসায় আগমন করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় মনে করেন, তিনি তাঁহার পিতার পরিচিত; পিতা মনে করেন, পুত্রের পরিচিত। বিদ্যাসাগর মহাশয় সেই সময় কি একটা বিশেষ কার্য্যের জন্য স্থানান্তরে যান, পরে ফিরিয়া আসিয়া দেখেন, লোকটী নাই। তখন পিতাকে লোকটীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলেন। পিতা বলিলেন-“সে কি, আমি জানি, উনি তোমারই পরিচিত; মনে করিলাম, তুমি আসিয়া উহার সহিত কথাবার্তা কহিবে। আমি একটা বিশেষ কায্যে ব্যাপৃত ছিলাম।” বিদ্যাসাগর মহাশয়, ব্যাপার বুঝিয়া


  1. বাল্যকালে বিদ্যাসাগর মহাশয়, দারিদ্র্য-পীড়ন হেতু স্বহস্তে রন্ধন করিতেন। সুতরাং রন্ধনে তিনি সিদ্ধহস্ত। স্বচ্ছন্দ উপার্জ্জনে সক্ষম হইয়াও অনেক সময় কেবল পিতৃসেবার্থে কেন, অনেককেই স্বহস্তে রন্ধন করিয়া খাওয়াইতেন। স্বহস্তে রন্ধন করিয়া খাওয়ান তাঁহার একটা সখ ছিল। খাওয়াইয়া তিনি পরম প্রীতিলাভ করিতেন। খাওয়াইতে বসিয়া, প্রায়ই প্রীতি প্রফুল্লতাভরে বলিতেন,—

    “হু হু দেয়ং হাঁ হাঁ দেয়ং দেয়ঞ্চ করকম্পনে।
    শিরসি চালনে দেয়ং ন দেয়ং ব্যাঘ্র ঝম্পনে।”