পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আনুইটি ফণ্ড।
৫০৫

কৃতাত্মনির্ভর ছিলেন। মধ্যে মধ্যে তিনি কলিকাতায় পিতার বাড়ীতে আসিতেন। দিনকতক থাকিয়া আবার চলিয়া যাইতেন। পিতার সঙ্গে কিছু বাক্যালাপ হইত না। কর্ত্তব্য-ত্রুটীহেতু একেবারে পুত্র-বিসর্জ্জন এ সংসারে বিরল। বিদ্যাসাগর মহাশয় পুত্রবর্জ্জনের একটা প্রকট দৃষ্টান্ত ফল। কিন্তু স্বাভাবিক মমতা সহজ পদার্থ নহে। কর্ত্তব্যানুরোধে বিদ্যাসাগর মহাশয় পুত্র নারায়ণকে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু নারায়ণের প্রতি তাঁহার স্নেহ যে বিচলিত হয় নাই, তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। এক দিন তিনি নারায়ণের ফটোগ্রাফ দেখিয়া দরবিগলিতধারে অশ্রুবিসৰ্জ্জন করিয়াছিলেন। নারায়ণের প্রতিগৃহীত হইবার বড় আশাও ছিল না। অনেকে তাঁহার বিপক্ষে প্রায় গুরুতর অভিযোগ আনিত। তাহাতে পুত্রকে পুনর্গ্রহণের প্রবৃত্তি আর জাগিতে পারিত না।

 ১২৭৯ সালের ২রা আষাঢ় বা ১৮৭২ খৃষ্টাব্দের ১৫ই জুন “হিন্দু ফ্যামিলি আনুইটি ফণ্ড” প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ফণ্ড প্রতিষ্ঠার মহদুদ্দেশ্য—সামান্য আয়সম্পন্ন বাঙ্গালী, মৃত্যুকালে পিতা, মাতা, বনিতা, সন্তান-সন্ততি কি আত্মীয়বর্গের জন্য কোনরূপ সংস্থান করিয়া যাইতে পারে না; যাহাতে এরূপ সংস্থান হয়, তাহার জন্য এই ফণ্ডের সৃষ্টি। তুমি যদি ইচ্ছা কর, তোমার স্ত্রী কিম্বা অন্য কোন আত্মীয় তোমার মৃত্যুর পর মাসে মাসে যাবজ্জীবন পাঁচ টাকা হিসাবে পাইবে, তাহা হইলে তোমাকে প্রত্যেক মাসে এই ফণ্ডে দুই টাকা চারি আনা আন্দাজ জমা দিতে হইবে। তোমার দেহান্তে তাহা হইলে তোমার স্ত্রী বা আত্মীয় মাসে মাসে পাঁচ টাকা পাইবে।