পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১৬
বিদ্যাসাগর।

পিতৃসংসারের কার্য্যানবচ্ছেদে তিনি স্বর্গীয় স্বামীর স্মৃতিসংযোগে একটীবারও অশ্রুপাতের অবসর পাইতেন না। বিদ্যাসাগর মহাশয় দৌহিত্রদ্বয়ের বিদ্যার্জ্জনের পক্ষে কোন ত্রুটি রাখেন নাই। জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র শ্রীযুক্ত সুরেশচন্দ্র সমাজপতি এবং দ্বিতীয় দৌহিত্র শ্রীযুক্ত যতীশচন্দ্র সমাজপতি উভয়েই বাড়ীতে সংস্কৃত ও ইংরাজী শিক্ষা করিতেন।[১] স্কুলে দেওয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় যুক্তিযুক্ত মনে করিতেন না। তিনি স্বয়ং তাহাদিগকে সংস্কৃত শিখাইবার ভার লইয়াছিলেন। তাঁহাদিগকে তাঁহার অদেয় কিছুই ছিল না। তাঁহাদিগের পায়ে কাঁটা ফুটিলে বিদ্যাসাগরের বুকে বাজ বাজিত। তাঁহাদের মুখে পিতৃবিয়োগের স্মৃতিজনিত কোন আক্ষেপোক্তি শুনিলে বিদ্যাসাগর মহাশয় যৎপরোনাস্তি যাতনা অনুভব করিতেন। একবার জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র বিলাত যাইবার জন্য উদ্যোগী হন। মাতামহ ও মাতা উভয়েই নিষেধ করেন। সুরেশচন্দ্র এক দিন আহার করিতে করিতে, মাকে বলিয়াছিলেন,—“আমার বাপ থাকিলে কি, তোমার বাপকে বলিতে যাইতাম?” বিদ্যাসাগর মহাশর অন্তরাল হইতে এই কথা শুনিয়া চক্ষের জলে ভাসিয়া গিয়াছিলেন। দৌহিত্রদের আহারের সময় তিনি প্রত্যহ নিকটে বসিয়া থাকিতেন। কাহারও কোন সদনুষ্ঠান দেখিলে তাঁহার আনন্দের সীমা থাকিত না। একবার কনিষ্ঠ দৌহিত্র পথপতিত একটী আমাশয়-রোগাক্রান্ত রোগীকে তুলিয়া লইয়া বাড়ীতে আনিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আনন্দের সীমা ছিল না। দৌহিত্রের করুণা তাঁহার কারুণ্যস্রোতে মিশিয়া গঙ্গা-যমুনার স্রোত


  1. সুরেশচন্দ্র সমাজপতি বসুমতী সংবাদপত্র ও সাহিত্য নামক মাসিক পত্রের সম্পাদক সুলেখক এবং সুবক্তা ছিলেন।