পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অষ্টত্রিংশ অধ্যায়।

পাদুকা-বিভ্রাট।

 ১২৮০ সালের ১৬ই মাঘ বা ১৮৭৪ খৃষ্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারি বিদ্যাসাগর মহাশয় কাশীর মৃত কবি হরিশ্চন্দ্রকে কলিকাতার “মিউজিয়ম” (যাদুঘর) দেখাইতে লইয়া যান। সঙ্গে রাজকৃষ্ণ বাবুর দ্বিতীয় পুত্র সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন। তখন পার্ক স্ট্রীটে যাদুঘর ও এসিয়াটিক সোসাইটী এক বাড়ীতেই ছিল। বলা বাহুল্য বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বেশ,—সেই থান ধুতি, থান চাদর ও চটি জুতা। কবি হরিশ্চন্দ্রর[১] পোষাক-পরিচ্ছদ আধুনিক সভ্যজনোচিত,—


  1. হরিশ্চন্দ্র একজন প্রতিভাশালী হিন্দী কবি। হিন্দী কবিত্বযশে বর্ত্তমান কালে তিনি অতুলনীয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহার গুণগ্রাহী ছিলেন। গুণগ্রাহিতার গুণে বিঙ্গাসাগরের সঙ্গে হরিশ্চন্দ্রের প্রগাঢ় সখ্য স্থাপিত হইয়াছিল। হরিশ্চন্দ্র বিদ্যাসাগরের উৎসাহে বাঙ্গালা শিখিয়াছিলেন। ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দে হরিশ্চন্দ্র জগন্নাথ তীর্থে যাইবার জন্য কলিকাতায় আসেন। সেই সময় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত তাঁহার আলাপ হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহাকে আপনার সকল পুস্তকের অনুবাদাধিকার দিয়া রাখিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জননী যখন কাশীধামে ছিলেন, হরিশ্চন্দ্র তখন তাঁহার তত্ত্বাবধান করিতেন। এদিন হরিশ্চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জননীকে বলেন—“বিদ্যাসাগরের মায়ের হাতে রূপার খাড়ু! ইহাতে বিদ্যাসাগরের জননী উত্তর দেন,—“সোণা রূপায় কি করে? উড়িষ্যার দুর্ভিক্ষের সময় এই হস্তে রাঁধিয়া সহস্র সহস্র লোককে খাওয়াইয়াছিল। তাহাই বিদ্যাসাগরের মায়ের হাতের শোভা।” কবি হরিশ্চন্দ্র অকালে ১৮৮৫ ধৃষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ৩৪ বৎসর বয়সে মানবলীলা সংবরণ করেন।