পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাদুকা-বিভ্রাট।
৫১৯

পায়ে ইংরেজি জুতা, গায়ে চাপকান চোগা এবং মস্তকে পাগড়ী। গাড়ী হইতে নামিয়া তিন জনেই যাদুঘরে প্রবেশোম্মুখ হইলেন। দ্বারবান বিদ্যাসাগর মহাশয়কে যাইতে নিষেধ করিল। হরিশ্চন্দ্রের পক্ষে নিষেধ রহিল না। সুরেন্দ্র বাবুও নিশ্চিতই সুসজ্জিত ছিলেন; কেননা তিনিও অবাধে প্রবেশাধিকার পাইলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়কে অবশ্য বুঝান হইল, তাঁহার মতন একজন উড়িয়াকে জুতা খুলিয়া রাখিয়া যাইতে হইবে।[১]

 বিদ্যাসাগর মহাশয় আর দ্বিরুক্তি না করিয়া গাড়ীতে আসিয়া বসিলেন। এ সংবাদ তাৎকালিক “এসিয়াটিক সোসাইটী”র আসিটাণ্ট সেক্রেটরী ও কলিকাতার ভূতপূর্ব্ব রেজিষ্টার শ্রীযুক্ত প্রতাপচন্দ্র ঘোষ[২]মহাশয়ের কর্ণগোচর হইয়াছিল। তিনি সংবাদ পাইয়া, তাড়াতাড়ি আসিয়া, বিদ্যাসাগর মহাশয়কে ভিতরে লইয়া যাইবার জন্য অনুরোধ করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিলেন,—“আমি আর যাইতেছি না; অগ্রে কর্ত্তাদিগকে পত্র লিখিয়া জানিব, এরূপ কোন নিয়ম আছে

  1. বিদ্যাসাগর মহাশয় অনেক সময় অপরিচিত জনের নিকট সত্য সত্যই একজন সভ্যভব্য উড়িয়ার সম্মান লাভ করিতেন। তিনি একদিন স্বয়ং হাসিতে হাসিতে এই গল্পটী করিয়াছিলেন,—“আমি পটলডাঙ্গার পথ দিয়া যাইতেছিলাম; সেই সময় তাগা হাতে দানা গলায় তসর-পরা বোধ হয় কোন বড়মানুষের ঝি যাইতেছিল। আমার চটি জুতার ধূলা তাহার গায়ে লাগিয়াছিল। মাগী বলিল;—‘আ মর উড়ের তেজ দেখ।’ কাম্বেল সাহেব সত্য সত্যই আমাকে উড়ে করেছে।” কাম্বেল সাহেবের সময় বীরসিংহ গ্রাম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত হয়।
  2. শ্রীযুক্ত প্রতাপচন্দ্র ঘোষ মহাশয় এখন বিন্ধ্যাচলে বাস করিতেছেন।