পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩৬
বিদ্যাসাগর।

শীতের সময় সাঁওতালদিগকে চাদর ও কম্বল বিতরণ করিতেন। যে সময়ের যে ফল,সর্ব্ব-সুরসবঞ্চিত দরিদ্র সাঁওতাল, বিদ্যাসাগরের প্রসাদে তাহার রসাস্বাদনে পরিতৃপ্ত হইত। বস্ত্র নাই, বিদ্যাসাগর বস্ত্র দিতেন, অন্ন নাই, অন্ন দিতেন; যাহা নাই, তাহাই দিতেন। সাঁওতাল প্রবল পীড়ায় শয্যাগত; বিদ্যাসাগর তাহার শিয়রে বসিয়া মুখে ঔষধ ঢালিয়া দিতেন; হাঁ করাইয়া পথ্য দিতেন; উঠাইয়া বসাইয়া মলমূত্র ত্যাগ করাইতেন; সর্ব্বাঙ্গে হাত বুলাইয়া দিতেন। বিদ্যাসাগর যেখানে, সেইখানেই প্রেম ও করুণা। তিনি প্রাতঃকালে ভ্রমণে বাহির হইতেন; প্রত্যেক সাঁওতালবন্ধুর গৃহে গৃহে ঘুরিয়া বেড়াইতেন; কাহার নিকট কুমড়া, কাহার নিকট বেগুণ, কাহার নিকট শশা ইত্যাদি উপহার লইয়া, প্রফুল্লবদনে বাঙ্গালায় ফিরিয়া আসিতেন। বাঙ্গালার প্রাঙ্গণভূমি পরিচ্ছন্ন-পরিষ্কৃত এবং স্বহস্তে-রোপিত নানা ফল-ফুলের বৃক্ষে পরিশোভিত; যেন একখানি ক্ষুদ্র নন্দন-কানন। যখনই তিনি কর্ম্মটাঁড়ে যাইতেন, তখনই হয় কন্যা, না হয় দৌহিত্র, না হয় অন্য কোন আত্মীয় তাঁহার সঙ্গে থাকিতেন। ইচ্ছা হইলে বিদ্যাসাগর সাঁওতালদিগকে নাচাইতেন। সরল-হৃদয় সাঁওতালদের সেই বর্ব্বর-নর্ত্তনে সারল্যের অনুপম মাধুর্য্য অনুভব করিয়া বিদ্যাসাগরের করুণ-হৃদয়খানি বিপুল পুলকে প্লাবিত হইয়া যাইত। সত্য সত্যই তিনি কর্ম্মাটাঁড়ে যাইয়া স্বর্গীয় শান্তি উপভোগ করিতেন। সাঁওতাললিগের শিক্ষার জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয় একটী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেন।

 বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত ব্যক্তিগণ স্বাস্থ্য-