পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাঁওতাল।
৫৩৭

সম্পাদন-মানসে অনেক সময় কর্ম্মাটাঁড়ে যাইতেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় সকলকেই সাদর-সম্ভাষণায় ও আতিথ্য-অভ্যর্থনায় আপ্যায়িত করিতেন। একবার সংস্কৃত কলেজের ভূতপূর্ব্ব প্রিন্সিপাল মহামহোপাধ্যায় নীলমণি ন্যায়ালঙ্কার মহাশয় অত্যন্ত অসুস্থ হইয়া কর্ম্মাটাঁড়ে গিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বহস্তে তাঁহার মলমূত্রাদি পরিষ্কারের ভার লইয়াছিলেন। তাহাতে ন্যায়ালঙ্কার মহাশয় লজ্জিত হইয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় বলেন,—“ইহার জন্য লজ্জা কি? বায়না দিয়া রাখিলাম।” বলিয়াছি ত, বিদ্যাসাগর সময় বুঝিয়া, পাত্র-বিবেচনায় সকল সময় যথাযোগ্য রহস্য করিতেন। একবার তিনি চারিটী পণ্ডিতকে লইয়া লাট-দরবারে গিয়াছিলেন। পণ্ডিতগণ দেখেন, বাঙ্গালী ব্যতীত সকলের মস্তকে উষ্ণীষ। তাঁহারা বলেন—“ইহার কারণ কি?” বিদ্যাসাগর মহাশয় হাসিয়া বলেন,—“বাঙ্গালী মাতৃভূমির আর কোন কাজ করিতে পারেন নাই; মাথার উষ্ণীষ ত্যাগ করিয়া, মাতৃভূমির ভার কমাইয়াছে।” ইহা রহস্য বটে; কিন্তু মর্ম্মান্তিক।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় সাঁওতালদিগের সরলতা ও সত্যপ্রিয়তার প্রথম পরিচয় এইরূপে প্রাপ্ত হন,—“পূর্ব্বে কর্ম্মাটাঁড়ে জমী-জমার আঁটা-আঁটী সরহদ্দ ছিল না। অনেকে অনেক সময় জমী কিনিয়া, অপরের জমী টানিয়া লইতেন। এক জন বাঙ্গালী বাবু একবার এইরূপ একটু জমী টানিয়া লইয়া বেড়া দেন। অভিযোগ হইয়াছিল। অভিযোগে হাকিমের তদন্তে আসিবার কথা ছিল। যে দিন হাকিমের আসিবার কথা, সেই দিন কতকগুলি সাঁওতাল বাবুটীর জমীতে কাজ করিতেছিল। বাবুটী তাহাদিগকে বলেন,—“হাকিম আসিলে তোরা বলিস্,—বেড়ার ভিতরের জমী সব