পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অসুখে প্রবাস।
৫৭৭

বিদ্যাসাগর মহাশয় জামাতা, কন্যা এবং তাঁহাদের পুত্রকন্যাকে বড় ভালবাসিতেন।

 এই বৎসর কলিকাতার বাদুড়বাগানের বাড়ী সম্পূর্ণ হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় বহুব্যয়ে এই বাড়ী প্রস্তুত করেন। শীত কালে তিনি এই বাড়ীতে প্রবিষ্ট হন। প্রথম তিনি স্বয়ং লাইব্রেরী লইয়া এই বাড়ীতে একাকী থাকিবার সঙ্কল্প করিয়াছিলেন, কিন্তু অন্য বাড়ী প্রাপ্ত হইবার সুবিধা না হওয়ায়, সপরিবারে বাস করিতে বাধ্য হন।

 আর দেহ বহে না! রোগে শরীর জীর্ণ! ইহার উপর মাতৃশোক ও পিতৃশোক! আর কত সহে! তেজস্বী পুরুষ, তাই এত দিন দেহ বহিয়াছিল। আর কত দিন! প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামে দেবতা হারে, মানুষ কোন্ ছার। দুর্জ্জয় বীর বিদ্যাসাগর ক্রমে শোণিতশূন্য ও শক্তিহীন হইয়া আসিতে লাগিলেন। তিনি সংসারের সকল কঠোর কার্য্য পরিত্যাগ করিলেন। কলিকাতায় আর তিনি বেশী দিন থাকিতে পারিতেন না। ক্রমে সংসার-কোলাহল ভয়ঙ্কর কষ্টকর হইতে লাগিল। তাই তিনি কখন বা কর্ম্মটাড়ে, কখন বা ফরাসডাঙ্গায় থাকিতেন। কর্ম্মটাড়েই তিনি বেশী দিন থাকিতেন। কর্ম্মটাড়ে সরল সাঁওতালগণ তাঁহাকে মন্ত্রমুগ্ধ করিয়াছিল। তিনি তাহাদিগকে সহজে পরিত্যাগ করিতে পারিতেন না। প্রত্যহ সাঁওতালগণের কেহ না কেহ যথাসাধ্য উপহার লইয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিত। একবার একটা সাঁওতাল একটী মোরগ উপহার আনিয়াছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়, মোরগ উপহার দেখিয়া, হাসিয়া বলেন,—“আমি ব্রাহ্মণ, মোরগ লই কি করিয়া?” সাঁওতাল