পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮৪
বিদ্যাসাগর।

 ১২৯৫ সালের ৩০শে শ্রাবণ বা ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দের ১৩ই আগষ্ট বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পত্নী রক্তামাশয় পীড়ায় লোকান্তরিত হন। মৃত্যুর কিয়ৎকাল পূর্ব্বে ইনি কপালে করাঘাত করিতে আরম্ভ করেন। জ্যেষ্ঠা কন্যা পিতাকে ডাকিয়া বলেন,—“বাবা, মা কি বলিতেছেন শুনুন।” বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিলেন—“বুঝিয়াছি, তাই হইবে; তার জন্য আর ভাবিতে হইবে না।” কপালে করাঘাত,—পুত্রের জন্য করুণা-ভিক্ষা। আশ্বাস পাইয়া সতী সুখে প্রাণ বিসর্জ্জন করেন।

 পত্নী দীনময়ী প্রকৃত গৃহিণী ছিলেন। তিনি শ্বশ্রূঠাকুরাণীর ন্যায় স্বহস্তে রন্ধন করিয়া লোজনকে খাওয়াইতে বড় ভালবাসিতেন। দানধ্যানেও তাঁহার পূর্ণ প্রবৃত্তি ছিল। বর্জ্জিত পুত্র নারায়ণের জন্য পতির সহিত তাঁহার অনেক সময় বাদবিসংবাদ ঘটিত। এই বাদবিসংবাদই সদ্ভাবত্রুটির মূল কারণ হইয়াছিল। অনেক সময় তিনি গোপনে পুত্রকে অর্থসাহায্য করিতেন; এমন কি নিজের অলঙ্কার পর্যন্ত বন্ধক দিতেন। এজন্য বিদ্যাসাগর মহাশয় বিরক্ত হইয়া তাঁহাকে টাকাকড়ি দেওয়া বন্ধ করিতেন। পিতা শত্রুঘ্ন যেমন তেজস্বী ছিলেন, কন্যা দীনময়ীও তেমনি তেজস্বিনী ছিলেন। স্বামীর নিকট একবার কোন জিনিষ চাহিয়া না পাইলে, তিনি দুর্জ্জয় অভিমানে অভিভূত হইতেন। তেজস্বী বিদ্যাসাগর তাহার জন্য বিচলিত হইতেন না। এইরূপে মনোবাদ ঘটিত। দীনময়ী তেজস্বিনী ছিলেন; কিন্তু পিতার ন্যায় তাঁহার যথেষ্ট উদারতা ছিল।

 পত্নীবিয়োগের পর বিদ্যাসাগর মহাশয়ের হৃদয়ে দাম্পত্য সুখাভাবের সুদারুণ স্মৃতি জাগরিত হইয়াছিল। সেই স্মৃতিতাড়নায়