পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮৬
বিদ্যাসাগর।

এ অসম্মতির কারণ অবশ্য অক্ষমতা। গুরুদাস বাবু বিদ্যাসাগর মহাশয়কে পিতৃবৎ ভক্তি করিতেন। যখন কলিকাতা রাধাবাজারে কলিকাতা-প্রসের কার্য্যাধ্যক্ষ ছিলাম, তখন সেই প্রেসে গুরুদাস বাবুর প্রণীত ইংরেজী অঙ্ক-পুস্তক মুদ্রিত হইত। সেই সময় তাঁহার সহিত আলাপ-পরিচয় হইয়াছিল। তাঁহার মুখে প্রায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গুণকীর্ত্তন শুনিতাম। তিনি স্ব-প্রণীত অঙ্ক-পুস্তক বিদ্যালয়ে প্রচলিত করিবার জন্য একমাত্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কে অনুরোধ করিয়াছিলেন। অন্য কাহাকেও বলিতে তাঁহার প্রবৃত্তি হইত না। এ কথা, তখন তাঁহারই মুখে শুনিয়াছিলাম। এক গুরুদাস বাবু স্কুল-কলেজের ভার লইলে, বিদ্যাসাগর মহাশয় নিশ্চিন্ত থাকিতে পারিতেন। এমন অটল বিশ্বাস আর কাহারও উপর ছিল না। উভয়ের হৃদয়ে নিত্য তরঙ্গায়িত ঘাত-প্রতিঘাতে ভক্তি-বাৎসল্যের অবিচ্ছিন্ন শ্রোত প্রবাহিত হইত। বিদায়-হিসাবে বিদ্যাসাগর মহাশয়, কোন দ্রব্য লইবেন না বুঝিয়া গুরুদাস বাবু মাতৃ-শ্রাদ্ধোপলক্ষে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে একটা রৌপ্য-নির্ম্মিত গ্লাস উপহার দিয়াছিলেন। নারায়ণ বাবুর নিকট এই সুন্দর সুগঠিত গ্লাসটী দেখিয়াছিলাম। গ্লাসে এইরূপ খোদিত আছে,—

“পানপাত্রমিদং দত্তং বিদ্যাসাগরশর্ম্মণে।
স্বর্গ কামনায় মাতুর্গুরুদাসেন শ্রদ্ধয়া॥”

 রোগ-শীর্ণ-দেহে স্কুল-কলেজের চিন্তায় জর্জ্জরিত হইয়াও, বিদ্যাসাগর এক দিনের জন্য জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রাম বিস্মৃত হন নাই। ১৮।১৯ বৎসর তিনি বীরসিংহ গ্রামে গমন করেন নাই বটে; কিন্তু বীরসিংহের মায়া পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই। এক দিন তিনি কলেজ হইতে ফিরিয়া আসিয়া উপরে উঠিতেছিলেন, সে