পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সহৃদয়তা।
৫৮৯

উদরাময় পীড়া বলবতী হইয়া উঠে। ইহার পূর্ব্বে ছয় বৎসর কাল তিনি উদরাময়ে ভুগিতেছিলেন। এই ছয় বৎসর কাল আহারে অন্নাদির গুরুপাক কতকটা সহ্য হইত। ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে অন্নাহার একেবারে বন্ধ হইয়াছিল। সিদ্ধ-করা বার্লি, পালো প্রভৃতি মাত্র আহার ছিল। অগ্রহায়ণ মাসে ডাক্তার হীরালাল ঘোষ বিদ্যাসাগর মহাশকে নির্জ্জনে থাকিবার পরামর্শ দেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় বলেন,—“কলিকাতায় থাকিলে তাহা চলিবে না; লোকে সাক্ষাৎ করিতে আসিলে, বলিতে পারিব না, সাক্ষাৎ করিব না; আর দরজায় দরোয়ানও বসাইতে পারিব না।” অবশেষে স্থানান্তরে যাওয়া সিদ্ধান্ত হইল। অগ্রহায়ণ মাসে তিনি জ্যেষ্ঠা কন্যাকে সঙ্গে লইয়া ফরাসডাঙ্গায় যান, সেখানে ভাগীরথীতটে একটি সুন্দর-সুগঠিত স্বাস্থ্যপ্রদ দ্বিতল বাড়ী ভাড়া লওয়া হইয়াছিল। এই বাড়ীতে থাকিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় অপেক্ষাকৃত ভাল ছিলেন।

 ফরাসডাঙ্গার স্বাস্থ্য-প্রবাসেও দান ও দয়া অবিরাম এবং সহৃদয়তার অবাধ স্রোত। একদিন একটা অন্ধ মুসলমান ভিক্ষুক স্ত্রীর হাত ধরিয়া ভিক্ষায় বাহির হইয়াছিল। সমস্ত সহর ঘুরিয়া একমুষ্টি ভিক্ষা মিলে নাই। শেষে সে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট যাইয়া উপস্থিত হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহার অবস্থা অবগত হইয়া, দয়ার্দ্র চিত্তে তাহাকে গোটাকতক পয়সা দিয়া, জিজ্ঞাসা করেন,—“তোর কি খাইতে ইচ্ছা হয়?

 ভিক্ষুক বলিল,—“আমি লুচি ও দই অনেক দিন খাই নাই। আমার এখন তাই খাইতে ইচ্ছা হয়।”

 বিদ্যাসাগর তখনই আপনার কন্যাকে দিয়া লুচি প্রস্তুত