পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শোক।
৬১১

 এই সভায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্থায়ী স্মৃতিচিহ্ন রাখিবার সঙ্কল্প হইয়াছিল। কলিকাতার সংস্কৃত কলেজে তাঁহার প্রতিমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাঙ্গালীর কতক সৌভাগ্যের পরিচয় বটে। কিন্তু ইহাও প্রায় ঘটে না। আমরা বুঝি, কীর্ত্তিমানের কীর্ত্তিই অনন্তু অক্ষয় স্মৃতিস্তম্ভ। ধাতু প্রস্তর নির্ম্মিত প্রতিমূর্ত্তি বা পটাঙ্কিত প্রতিকৃতি পদে পদে প্রতিকৃতির অধীন। দুই দিনে তাহার লয় সম্ভাবনা; প্রলয়ে কীর্ত্তির বিলোপ নাই। কীর্ত্তি অবিনশ্বর ও অনন্ত-ভাস্বর। যাঁহার স্মৃতিচিহ্ন স্থাপনের সংকল্প করিয়া, সিদ্ধ করিতে পারেন না, তাঁহাদের জন্য আমাদের বাস্তবিক আন্তরিক কষ্ট হয়। সভা করিয়া বাগাড়ম্বরে শোক প্রকাশ করিবার প্রথা বাঙ্গালীর সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল। প্রথার পরম গুরু, বিলাতী সাহেব সম্প্রদায়। তবে সাহেব সম্প্রদায়, আধুনিক শিক্ষিত বাঙ্গালীর মত পলে পলে প্রতিজ্ঞাভঙ্গে পটু নহেন। বাঙ্গালীর এ গৌরববাদ অধুনা বিশ্ব-বিসর্পিত। সাহিত্যের রুচির চিত্রপটে ভাষার ললিত বর্ণলাবণ্যে কবি রবীন্দ্রনাথ, বাঙ্গালী চরিত্রের এই অংশের একটি উজ্জ্বল চিত্র অঙ্কিত করিয়াছেন। এমারেল্ড থিটোরে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্মরণ জন্য ১৩০২ সালের ১৩ই শ্রাবণ যে সভা হইয়াছিল, তাহাতে রবীন্দ্র বাবুর পঠিত “বিদ্যাসাগর চরিত” প্রবন্ধের একস্থলে এই কথা লেখা ছিল,—“আমরা আরম্ভ করিয়া শেষ করি না। আড়ম্বর করি, কাজ করি না। যাহা অনুষ্ঠান করি, তাহা বিশ্বাস করি না। যাহা বিশ্বাস করি, তাহা পালন করি না; ভূরি পরিমাণ বাক্য রচনা করিতে পারি; তিল পরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না।”