পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট।
৬২১

শূন্য হইলে, মার্শাল সাহেবের সুপারিশে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে ঐ পদ গ্রহণ করিতে অনুরোধ করা হয়। ঐ পদের বেতন ৯০৲ টাকা। বিদ্যাসাগর মহাশয় তৎকালে ৫০৲ টাকা মাত্র বেতন পাইতেন। তিনি কিন্তু ঐ পদ গ্রহণে অসম্মত হন; কারণ তাঁহার বিবেচনায় প্রসিদ্ধ তারানাথ তর্কবাচস্পতি মহাশয় ব্যাকরণ-শাস্ত্রের অধ্যাপনায় যোগ্যতর ব্যক্তি বলিয়া অনুমিত হইয়াছিল। তর্কবাচস্পতি মহাশয়ই ঐ পদে মনোনীত হইলেন এবং তাঁহাকে এই সংবাদ প্রদান করিবার নিমিত্ত বিদ্যাসাগর মহাশয় পদব্রজে কলিকাতা হইতে কালনাভিমুখে যাত্রা করিলেন। এই অপূর্ব্ব স্বার্থত্যাগ দেখিয়া তর্কবাচস্পতি মহাশয় অতিশয় বিস্মিত ও চমৎকৃত হইয়াছিলেন এবং বিস্ময়-বিহ্বলচিত্তে বলিয়াছিলেন, “ধন্য বিদ্যাসাগর! তুমি মানুষ নও, তুমি মনুষ্যাকারে দেবতা!”

 ১৮৪৬ খৃষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদকের পদ শূন্য হয়। তখন খ্যাতনামা বাবু রসময় দত্ত সংস্কৃত কলেজের সম্পাদক ছিলেন। তিনি ইতিপূর্ব্বেই বিদ্যাসাগর মহাশয়েয় অসামান্য প্রতিভা ও অসাধারণ উদ্যমের পরিচয় পাইয়াছিলেন। সহকারী সম্পাদকের পদের বেতন বৃদ্ধি করিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয়কে ঐ পদে নিযুক্ত করিতে তিনি শিক্ষাবিভাগের কর্ত্তৃপক্ষগণকে অনুরোধ করেন। বেতন বৃদ্ধি করা হইল না বটে, কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয় ঐ পদে মনোনীত হইলেন। ঐ পদে নিযুক্ত হইয়া তিনি সংস্কৃত-শিক্ষা-প্রণালী সংস্কারে মনোনিবেশ করিলেন। সংস্কারসম্বন্ধীয় তাঁহার কঠোর ব্যবস্থাসকল দেখিয়া রসময় বাবু পর্য্যন্ত ভীত হইলেন এবং তাঁহার কতিপয় প্রস্তাব অনুমোদিত না হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করিয়া কিছুদিনের জন্য [দুষ্পাঠ্য] হইতে অবসর গ্রহণ করেন।