পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
বিদ্যাসাগর।

দিন বলেন,—“ইহার পাঠশালার লেখা-পড়া সাঙ্গ হইয়াছে; এ বালক বড় বৃদ্ধিমান; ইহাকে তুমি সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়া কলিকাতায় রাখ, তথ্য ভাল করিয়া ইংরেজী বিদ্যার শিক্ষা দাও।” কালীকান্তের কথা শুনিয়া ঠাকুরদাস বালক বিদ্যাসাগরকে কলিকাতায় আনাই স্থির করেন।

 এই সময় পিতামহ রামজয় তর্কভূষণের দেহত্যাগ হয়। তাঁহার মুত্যু হইবার পর ১৮২৯ খৃষ্টাব্দে বা ১২৩৬ সালের কার্ত্তিক মাসের শেষ ভাগে ঠাকুরদাস, গুরুমহাশয় কালীকান্তের পরামর্শে ঈশ্বরচন্দ্রকে লইয়া কলিকাতা যাত্রা করেন। সঙ্গে কালীকান্তু ও আনন্দরাম গুটি নামক তৃত্য ছিল। অষ্টম-বর্ষীয় বালক, গৃহ পরিত্যাগ করিয়া বিদেশে যাইতেছে দেখিয়া, বালক বিদ্যাসাগরের স্নেহময়ী জননী মুক্তকণ্ঠে রোদন করিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর যেমন মাতৃভক্ত ছিলেন, তাঁহার জননীও তেমনই পুত্রবৎসল ছিলেন।

 পিতা, পুত্র, গুরুমহাশয় এবং তৃত্য,—চারি জনকেই পদব্রজে কলিকাতায় আসিতে হইয়াছিল। তখন জলপথ বড় সুগম ছিল না। উলুবেড়ের নূতন খালও তখন কাটা হয় নাই। গাঙের, মাঝ দিয়া নৌকা করিয়া আসাটাও বড় বিপদ সঙ্সকুল ছিল। একে তো ঝড়তুফানের ভয়, তাহার উপর দস্যু-ডাকাতের উপদ্রব; কাজেই গৃহস্থ লোক বড় কেই নৌকা করিয়া আসিত না। ব্যবসাদারমহাজনের নির্দিষ্ট দিনে জোট বাঁধিয়া যাতায়াত করিত মাত্র। এতদ্ভিন্ন অনেককেই হাট পথে আসিতে হইত। যাতায়াতের সময় অনেকেই মধ্যে মধ্যে চটি বা আত্মীয়বর্গের বাটীতে আশ্রয় লইত। ঠাকুরদাসও সদল-বলে প্রথম দিন পাতুলগ্রামে মামা-শ্বশুরের বাটীতে বিশ্রাম করেন। পর দিন তিনি সন্ধ্যার সময় দশ ক্রোশ