পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কলিকাতায় যাত্রা।
৪১

দূরস্থিত সন্ধিপুর গ্রামে এক জন আত্মীয় ব্রাহ্মণের বাটীতে থাকেন। পর দিন তাঁহার শেয়াখালা হইতে শালিখার বাঁধা, রাস্তা দিয়া কলিকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন। ঈশ্বরচন্দ্র যে ধারকতাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিপ্রভাবে ভবিষ্যৎ জীবনে কীর্ত্তিকুশলতা লাভ করিয়াছিলেন, এই পথের মাঝে সেই সুকুমার কোমল বয়সেই তাহার নিদর্শন দেখাইয়াছিলেন। বিশাল বৃক্ষের অঙ্কুরোদ্ভব এইখানে হইল।

 এই পথের মাঝে “মাইল-ষ্টোন” অর্থাৎ পথের দূরত্ব জ্ঞাপক শিলাখণ্ড দেখিয়া বালক ঈশ্বরচন্দ্র জিজ্ঞাসা করেন,—“বাবা, বাটনা বাটিবার শিলের মতন এটা কি গা?” পিতা ঠাকুরদাস ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন,—“ইহার নাম ‘মাইল-ষ্টোন’-আধক্রোশ অন্তর এইরূপ এক একটা ‘মাইলষ্টোন’ পোতা আছে। ইংরেজী অক্ষরে মাইলের অঙ্ক লেখা।” ঈশ্বরচন্দ্র “মাইলষ্টোন” দেখিয়া ১ হইতে ১০ পর্য্যন্ত ইংরেজি অক্ষর শিখিয়া লইলেন। মধ্যে এক স্থানের “মাইল-ষ্টোন” দেখান হয় নাই। ঈশ্বরচন্দ্র বলেন,—“আমরা একটা,মাইল-ষ্টোন দেখিতে ভুলিয়া গিয়াছি।” গুরুমহাশয় কালীকান্ত বলেন,—“ভুলি নাই,তুমি শিখিয়াছ কি না,জানিবার জন্য তোমাকে দেখাই নাই।”

 ক্রমে সন্ধার সময় তাহার শালিখার ঘাটে গঙ্গা পার হইয়া কলিকাতায় বড়বাজারের দয়েহাটায় শ্রীযুক্ত জগদুর্ল্ভ সিংহের বাটীতে উপস্থিত হন। এই জগদদুর্ল্ভ সিংহের পিতা ভাগবতচরণ সিংহ ঠাকুরদাসকে বাড়ীতে আশ্রয় দিয়াছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের কলিকাতায় আসিবার পূর্ব্বে তাঁহার মৃত্যু হয়। জগদদুর্ল্ভ বাবু পিতার স্তায় ঠাকুরদাসকে ভক্তি-শ্রদ্ধা, এমন কি তাহাকে পিতৃসম্বোধনও করিতেন। জ্গদদুর্ল্ভ একমাত্র বাড়ীর কর্ত্তা বয়স তাঁহার তখন ২৫ পঁচিশ বৎসর মাত্র। গৃহিণী, জ্যেষ্ঠা, ভগিনী,