পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
বিদ্যাসাগর।

করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় বৎসরে তিনি মাধ, ভারবি, শকুন্তলা, মেঘদূত, উত্তরচরিত, বিক্রমোর্ব্বশী, মুদ্রারাক্ষস, কাদম্বরী, দশকুমারচরিত প্রভৃতি পাঠ করেন। এ সব কাব্য আদ্যোপান্ত তাঁহার কণ্ঠস্থ ছিল।অনুবাদে তিনি অদ্বিতীয় ছিলেন। পুস্তক না দেখিয়া তিনি সংস্কৃত নাটকাদি অনর্গল বলিতে পারিতেন। স্বাদশ বর্ষীয় বালক সংস্কৃত কথা কহিতে পারিতেন। প্রাকৃত ভাষায় কথা কহিতেও তাঁহার কোন সঙ্কোচ হইত না। তদানীন্তন পণ্ডিতগণ তাহার অদ্ভুত স্মৃতি-শক্তি ও অশ্রুত-পূর্ব বাক্যবিন্যাস-ক্ষমতা দেখিয়া মোহিত হইতেন এবং প্রায়ই বলিতেন,—“এ বালক পৃথিবীতে অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইবে।” প্রতিভা আর কাহাকে বলে?

 দ্বিতীয় বৎসর সাহিত্য-পরীক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র সর্ব্বপ্রথম হন। হস্তাক্ষরেরর জন্য তিনি প্রতি বৎসর পারিতোষিক পাইতেন। হস্তাক্ষরের প্রশংসা তাঁহার যাবজ্জীবন ছিল। সকল সাহিত্যসেবকের ভাগে এরূপ প্রশংসা ঘ্টিয়া উঠে না। আধুনিক উচ্চতম সাহিত্য-সেবক ও সাহিত্য-সমালোচকদিগের সংস্রবে থাকিয়া আমাদের কতকটা এই প্রতীতি জন্মিয়াছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় অনেক সংস্কৃত পুঁথি স্বহস্তে লিখিয়া লইতেন। পুঁথির লেখা দেখিয়া সকলে তাহার ভূয়সী প্রশংসা করিতেন। তিনি যে সকল পুঁথি স্বহস্তে লিখিয়া গিয়াছেন, তাহার পঙক্তিগুলি দেখিলে মনে হয়, যেন কারপেটে উল বুনিয়া লেখা।

 এই সময় বালক বিদ্যাসাগর জীবন-সংগ্রামে কঠোরতার অভেদ্য ব্যুহ-বিবরে পতিত হন। সে কঠোরতা দরিদ্র হীনাবস্থাপন্ন বালকের অনুকরণীয়, শিক্ষণীয় এবং সর্ব্ব সাধারণের চিরস্মরণীয়।