পাতা:বিদ্যাসাগর - প্রচার পুস্তিকা (১৯৫০).pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সংক্ষিপ্ত জীবনী

 বাংলা ১২২৭ সালে ১২ই আশ্বিন মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত বংশে ঈশ্বরচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তেজস্বী পুরুষ—মাতা ভগবতী ছিলেন ভগবতী-তুল্যা করুণারূপিনী। অসাধারণ পিতৃমাতৃভক্ত ঈশ্বরচন্দ্রের চরিত্রে পিতার দৃঢ়তা এবং মাতার করুণা সমভাবে পরিস্ফুট হইয়াছিল।

 গ্রাম্য পাঠশালায় পাঠান্তে অতি অল্প বয়সেই ঈশ্বরচন্দ্র পিতার সহিত কলিকাতায় যান সংস্কৃত শিক্ষা করিতে। পথে মাইল-ষ্টোন দেখিয়াই তিনি ইংরাজী বর্ণমালার সংখ্যাগুলি শিখিয়া ফেলেন। সংস্কৃত পাঠশালার অধ্যাপকগণ ঈশ্বরের ধীশক্তি দেখিয়া বিস্মিত হন। মাত্র একুশ বৎসর বয়সে সপ্ত-শাস্ত্র আয়ত্ব করিয়া তিনি বিদ্যাসাগর” উপাধি লাভ করেন।

 প্রথমে তিনি ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে ইংরাজ সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষা শিক্ষার শিক্ষক নিযুক্ত হন। এদেশে শিক্ষা-বিস্তার ও শিক্ষা-পদ্ধতির উন্নতি-বিধান সম্পর্কে বহু সুচিন্তিত পরিকল্পনা তিনি গভর্ণমেণ্টের নিকট পেশ করেন। গভর্ণমেণ্ট তাহার পরিকল্পনায় মুগ্ধ হইয়া তাঁহাকেই সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপ্যাল নিযুক্ত করেন এবং পশ্চিমবঙ্গের চারিটি জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের ভার দেন। বিদ্যাসাগর অত্যন্ত দক্ষতার সহিত এই উভয় গুরু দায়িত্ব সম্পন্ন করিতে থাকেন।

 যে অনন্যসাধারণ গুণরাশির জন্য বিদ্যাসাগর-চরিত্র স্মরণীয়—তাঁহার পাঠ্যাবস্থা ও কর্ম্মজীবন তাহাদের বহু নিদর্শনে অলঙ্কৃত। কর্ম্মক্ষেত্রে ইংরাজ কর্তৃপক্ষকে বহুক্ষেত্রে তাঁহার তেজস্বিতা ও চরিত্র-দৃঢ়তার কাছে নতিস্বীকার করিতে হয়। এক সময়ে ইংরাজ অধ্যক্ষের অশিষ্টতার সমুচিত শিক্ষা দিতে তাঁহার উদ্যত চটির ইতিহাস এবং অপূর্ব্ব মাতৃভক্তির প্রেরণায় সন্তরণে বর্ষাবিক্ষুব্ধ দামোদর পার হওয়ার কাহিনী আজ জাতীয় প্রবাদে পরিণত হইয়াছে।