ad এক মায়ের দুই ছেলে জননীকে আশ্রয় করিয়া যেমন করিয়া বাড়িয়া উঠিতে থাকে, দুইটি মাতা তেমনি একটি মাত্র সন্তানকে আশ্ৰয় করিয়া আরো ছয় বৎসর কাটাইয়া দিলেন। অমূল্য এখন বড় হইয়াছে, সে এন্ট্রান্স স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ঘরে মাষ্টার নিযুক্ত আছেন, তিনি সকাল-বেলা পড়াইয়া যাইবার পর অমূল্য খেলা করিতে বাহির হইয়াছিল। আজ রবিবার, স্কুল ছিল না। অন্নপূর্ণ ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, ছোটবেী, কি করি বলত ? বিন্দু তাহার ঘরের মেঝের উপর আলমারি উজাড করিয়া অমৃত্যু পোষাক বাছিতেছিল, সে কাকার সহিত কোন মক্কেলের বাড়ী নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইবে । বিন্দু মুখ না তুলিয়া বলিল, কিসের দিদি ? তাহার মেজাজটা কিছু অপ্ৰসন্ন। অন্নপূর্ণ রকমারি পোষাকের বাহার দেখিয়া অবাক হইয়া গিয়াছিলেন, তাই তাহার মুখের ভাবটা লক্ষ্য করিলেন না। কিছুক্ষণ নিঃশব্দে চাহিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এ কি সমস্তই অমূল্যর পোষাক নাকি ? বিন্দু বলিল, হঁ। অন্নপূর্ণ বলিলেন, কত টাকাই না তুই অপব্যয় করিস। এর একটার দামে গরীবের ছেলের সারা বছরের কাপড়-চোপড় হ’তে পারে। বিন্দু বিবক্ত হইল, কিন্তু সহজভাবে বলিল, তা পারে! কিন্তু গরীবে বড়লোকে একটু তফাৎ থাকেই, সে জন্য দুঃখ ক’রে কি হবে দিদি ? অন্নপূর্ণা বলিলেন, তা হোক বড়লোক, কিন্তু তোর সব কাজেই এক” বাড়াবাড়ি আছে ।
পাতা:বিন্দুর ছেলে - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৬
অবয়ব