পাতা:বিপিনের সংসার - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথাটা বলিয়াই বিপিনের মনে হইল মানী পাছে কি ভাবে, কথাটা বলা উচিত হয় নাই, মানীও তো জমিদারের মেয়ে ! “তোমার মত” কথাটা না বলিলেই চলিত। কিন্তু মানীর মুখ দেখিয়া বোঝা গেল না । সে বেশ সহজ ভাবেই বলিল, মনে হচ্ছে, পড়েছি। ভাল, পড়লে মানুষ চয়ে যাবে। এইবার রবি ঠাকুরের “চয়নিক” ব’লে কবিতার বই আছে, সেখান থেকে কবিতা মুখস্থ করা। খুব ভাল ভাল কবিতা। বিপিন খিল খিল করিয়া হাসিয়া বলিল, কাৰিতা আবার মুখস্থও করতে হবে । উঃ, তুই হাসালি মানী, পাঠশালায় ইস্কুলে যা কখনও হ’ল না, উঃ, এই বুড়ে বয়সে বলে কি না, হি-হি, বলে কি না হাঁ, মুখস্থ করতে হবে । আমার হুকুম। শুনতে বাধ্য তুমি । মানুষ বলে যদি পরিচয় দিতে চাও তবে তা দরকার । যা বলি তাই শোন, কাসি খুশি তুলে রাখা এখন কিন্তু অত্যন্ত কৌতুকের প্রাবল্যে বিপিনের হাসি তখনও থামিতে চায় না । মানী মাস্টারনী সাজিয়া তাহাকে কবিতা মুখস্ত করাইতেছে — এই ছবিটা তাতার কাছে এতই আমোদজনক মনে হইল যে, সে শাসিব বেগ তখনও থামাইতেই পারিল না । এবার মানীও হাসিয়া ফেলিল। বলিল, বড় হাসির কথাটা কি যে হ’ল তা তো বুঝিনে । আমার কথা গুলো কানো গেল, না গেল না ? -খুব গিয়েছে। আচ্ছা, তোর কবিতা মুখস্থ আছে ? —আছেই তো । ‘চিয়নিকা’র আদ্ধেক কবিতা মুখস্থ আছে। --সত্যি ? একটা বল না ? -এখন কবিতা বলবার সমর্য নয়। আর বললেই বা তুমি বুঝবে কি ক’রে, হয়েছে কি না ? তুমি তো জানি টেকি, কি ক’রে ধরবে ? --তাতেই তো তোর সুবিধে, না খুশি বলবি, ধাববার লোক নেই ।