পাতা:বিপ্রদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আকস্মিক জনসমাগমে সািন্ত্ৰ চক্ষুরুন্মীলন করিলেন - ভদ্রতা-প্রকাশের উদ্যম ইহার অধিক অগ্রসর হইল না। কিন্তু মহিলাটি চেয়ার ছাড়িয়া ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া দাড়াইলেন। হয়ত - মেমসাহেব হইয়া উঠতে তখনও পারেন নাই, কিন্তু উচু গোড়ালির জুতা ও পোষাক-পরিচ্ছদের ঘটা দেখিয়া মনে হয়, এ-বিষয়ে চেষ্টাক্স ক্রটি হইতেছে না । ঘরের মধ্যে আর একখানা আয়াম-চৌকি ছিল, বন্দন পিতাকে তাহাতে বসাইয়া দিয়া নিজে একখানি বেঞ্চি অধিকার করিয়া বসিল এবং অত্যন্ত সমাদরে বিপ্ৰদাসকে *করিয়া বলিল, জামাইবাবু, মিথ্যে দাড়িয়ে থাকবেন কেন, আমার কাছে ন। বৃহৎ কাষ্ঠে দোষ নেই, আপনার জাত যাবে না। শুনিয়া বন্দনার পিতা অল্প একটুখানি হাসিলেন, কহিলেন, বিপ্ৰদাসের ছোয়াছুয়ির বাচ-বিচার কি খুব বেশি না কি। বিপ্ৰদাস নিজেও হাসিল, বলিল, বাচ-বিচার আছে, কিন্তু কি হলে খুব বেশি। হয়, না জানলে এ-প্রশ্নের জবাব দিই কি করে ? বৃদ্ধ কহিলেন, এই ধর বন্দন যা বললে ? বিপ্ৰদাস কহিল, উনি না খেয়ে ভয়ানক রেগে আছেন । মেয়ের রাগের মাথায় যা বলে তা নিয়ে আলোচনা হয় না । বন্দনা বলিল, আমি রেগে নেই-একটুও রেগে নেই। বিপ্ৰদাস কহিল, আছ, এবং খুব বেশি রকমই রেগে আছ, নইলে আজ তুমি কলকাতায় না গিয়ে বাড়ী ফিরে যেতে। তা ছাড়া তোমার আপনিই মনে পড়ত যে, এইমাত্র আমরা এক গাড়ীতেই এলাম, জাত গিয়ে থাকলে অাগেই গেছে, বেঞ্চিতে বসার কৃথাটা শুধু তোমার ছল মাত্র। বন্দনা’ বলিল, হোক ছল, কিন্তু সত্য কথা বলুন ত মুখুয্যেমশাই, আমাদের ছোয়াছুয়ি করার জন্যে ফিরে গিয়ে আপনাকে আবার স্নান করতে হবে কি না ? চল না, বাড়ী গিয়ে নিজের চোখে দেখবে ? না। জানেন। আপনি, মাকে প্ৰণাম করতে গেলে তিনি ছোৰার ভয়ে দূরে সরে গিয়েছিলেন ? বলিতে বলিতে তাহার মুখ ক্ৰোধে ও লজ্জায় রাঙা হইয়া উঠিল। বিপ্রদাস ইহা লক্ষ্য করিল। উত্তরে শুধু শান্তভাবে বলিল, কথাটা মিথ্যে না, অথচ সত্যিও নয় । এর আসল কারণ তঁর কাছে না থাকলে তুমি বুঝতে পারবে না। কিন্তু সে সম্ভাবনাত নেই। না, নেই । এই তীব্ৰ অস্বীকারের হেতু এতক্ষণে বিপ্ৰদাসের কাছে স্পষ্ট হইয়া উঠিল। মনে