পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

রাষ্ট্রীয় সমিতির সভাপতি পদে ও কলিকাতা কর্পোরেশনের অল্ডারম্যান পদে ইস্তফা দেন। বিলাতের দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে কোনই ফল হইল না—কেবল দেশকে এক অপ্রয়োজনীয় পরাজয় ও অমর্য্যাদাকর আপোষের গ্লানি বহন করিতে হইল। গান্ধীজী রিক্তহস্তে দেশে ফিরিয়া আসিলেন। কর্ম্মপন্থা নির্দ্ধারণের জন্য বোম্বাইয়ে ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশন আহূত হইল। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, সুভাষচন্দ্র লাহোর কংগ্রেসে ওয়ার্কিং কমিটির সভ্যপদ ত্যাগ করেন। এবারকার বৈঠকে বিশেষ নিমন্ত্রণদ্বারা সুভাষচন্দ্রকে আলোচনায় যোগদান করিতে অনুরোধ করা হয়। সেখানে পুনরায় আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু এই আন্দোলনে যোগ দিবার পূর্ব্বেই কলিকাতায় প্রত্যাবর্ত্তনের পথে ১৯৩২ সালের ২রা জানুয়ারী বোম্বাই হইতে ত্রিশ মাইল দূরবর্ত্তী “কল্যাণ” ষ্টেশনে ১৮১৮ সালের তিন আইনে সুভাষচন্দ্র গ্রেফ্‌তার হন। তাঁহাকে মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত সিউনি জেলে লইয়া যাওয়া হইল। এইবারও জেলে তাঁহার স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া পড়িল। সিউনি জেল হইতে জব্বলপুর সেণ্ট্রাল জেলে, সেখান হইতে ভাওয়ালী স্বাস্থ্য-নিবাসে এবং সেখান হইতে চিকিৎসকগণ কর্ত্তৃক পরীক্ষার জন্য বলরামপুর হাসপাতালে সুভাষচন্দ্রকে ক্রমান্বয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু এই ভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে ও স্বাস্থ্যাবাসে ঘুরিয়া ফিরিয়াও যখন তাঁহার স্বাস্থ্যের কোন উন্নতি হইল না তখন সরকার তাঁহাকে চিকিৎসার জন্য ইউরোপে গমন করিতে সম্মতি দান করেন।

 ১৯৩৩ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী তিনি ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা করেন। যাত্রার প্রাক্‌কালে জাহাজ হইতে বাংলার উদ্দেশ্যে এক মর্মস্পর্শী বাণী প্রেরণ করেন—“বাঙলা মরিলে কে বাঁচিয়া থাকিবে? বাঙলা বাঁচিলে কে মরিবে?”