পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৮৭

সর্ব্বপ্রথম “সাম্যবাদ সঙ্ঘ” স্থাপনের প্রস্তাব করেন। এই সংঘের আদর্শ ও উদ্দেশ্য প্রচারের জন্য ২২ জন সদস্য লইয়া একটি কমিটি গঠিত হয়।

 সুভাষচন্দ্রের বৈদেশিক প্রচারকার্য্যের দুইটি লক্ষ্য ছিল। এক, ইউরোপবাসীদিগকে ভারতবর্ষের প্রকৃত অবস্থার সহিত পরিচিত করা ও বৃটিশগভর্ণমেণ্ট ও বৃটিশের প্রসাদপুষ্ট দলগুলির ভারতবিরোধী প্রচারকার্য্যের বিরোধিতা করা। দুই, ভারতবর্ষ ও ভারতবর্ষের রাষ্ট্রনৈতিক আশা-আশঙ্ক্ষার প্রতি উৎসাহশীল ও শ্রদ্ধাবান দেশ ও রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ঘোগাযোগ স্থাপন করা। সুভাষচন্দ্র একাধিকবার ঘোষণা করেন, ভারতবর্ষের পররাষ্ট্রনীতি কোন বৈদেশিক শক্তির পররাজ্যনীতির সহিত সংঘর্ষে প্রবৃত্ত হইবে না। ভারতবর্ষ পরম ঔদার্য্য ও সহিষ্ণুতার সহিত ও সম্পূর্ণ নির্লিপ্তভাবে বিভিন্নদেশের রাষ্ট্রিক মতবাদ ও চিন্তাধারার সহিত পরিচিত হইয়া বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের দ্বারা এক উদার ও সর্বজনগ্রাহ্য নীতির অনুসরণ করিবে। এই সময়ে ইউরোপে দুইটি মতবাদ বিশেষ প্রাধান্য লাভ করে। একদিকে নব্য ইটালীর ফ্যাসিবাদ—মুসোলিনী পৃথিবীব্যাপী এক বিশাল রোমক সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্নে বিভোর; অপরদিকে নবীন রাশিয়ার কম্যুনিজম বা সাম্যবাদ। সকলের দৃষ্টিই এই দুই দেশের উপর নিবদ্ধ। ফ্যাসিবাদী ইটালীর সমৃদ্ধি ও জয়যাত্রা সুভাষচন্দ্রকে আকৃষ্ট করিলেও তিনি যেমন ফ্যাসীতন্ত্রকে সর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করিতে পারেন নাই তেমনি কম্যুনিজমকেও তিনি নির্বিচারে গ্রহণ করার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তিনি ঘোষণা করিলেন, ‘the next phase in world history will produce a synthesis between Communism and Fascism’—ভারতবর্ষে যে নীতি অনুসৃত হইবে তাহা হইবে ফ্যাসিজম্ ও কম্যুনিজম এর সংশ্লেষণ। এই দুই মতবাদের মধ্যে যে যে বিষয়ে মিল আছে তাহার উপর ভিত্তি করিয়াই