পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৯১

রাজকীয় অভ্যর্থনার ব্যবস্থা হয়—সেখানকার লর্ড মেয়র স্বয়ং তাঁহাকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন। পররাষ্ট্রসচিব ডাঃ বেনেসের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ হয়। প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ও তিনি পরিদর্শন করেন। সেখান হইতে ফিরিয়া তিনি জেনেভাতে অবস্থান করেন এবং তৎপরে কিছু সময়ের জন্য ফ্রান্স পরিভ্রমণে যান। ইটালীতে তিনি এশিয়াবাসী ছাত্রদের এক সম্মেলনে যোগদান করেন। সিনর মুসোলিনী ঐ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এই সময়েই তিনি কয়েকদিন রোমে থাকিয়া সেখানকার ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র সংগঠন পর্য্যবেক্ষণ করেন।

 ১৯৩৪ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বল্কান দেশগুলি পরিভ্রমণ করেন। বুদাপেষ্ট, বুখারেষ্ট, সোফিয়া, বেলগ্রেড প্রভৃতি রাজধানীগুলিতে তিনি বক্তৃতা প্রদান করেন এবং ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম ও ভারতে সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়নের কথা ইউরোপের জনগণের নিকট প্রচার করেন। ইউরোপে প্রবাসজীবন যাপন কালে তিনি “ভারতীয় সংগ্রাম ১৯২০-৩৪” (Indian Struggle—1920-1934) নামে একখানি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি বামপন্থীর দৃষ্টি লইয়া ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন এবং বৃটিশ স্বেচ্ছাতন্ত্র কি জঘন্য ষড়যন্ত্র ও নির্মম নির্য্যাতনের দ্বারা এই আন্দোলন ও গণজাগরণ দলন ও দমন করিতেছে, তাহার মর্মস্পর্শী বর্ণনা প্রদান করেন। এই গ্রন্থে তাঁহার ইউরোপ পর্য্যটনের অভিজ্ঞতাও বর্ণিত হইয়াছে। এই পুস্তকখানি ইংলণ্ডে প্রকাশিত হয় ও বহু মণীষী ইহার ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্যার স্যামুয়েল হোর এই গ্রন্থের ভারত-প্রবেশ নিষিদ্ধ করিয়া দেন। কারণ তাঁহার মতে এই পুস্তক সন্ত্রাসবাদের প্রশ্রয় দেয়। সম্প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ।

 এদিকে ১৯৩৪ খৃষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে সুভাষচন্দ্রের পিতা জানকীনাথ অসুস্থ হইয়া পড়েন এবং তাঁহার অবস্থা ক্রমশঃই বিশেষ আশঙ্কাজনক হইয়া