পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

সদস্যগণকে বাছাই করিয়া লওয়া কর্ত্তব্য। আপনি দেশের জন্য যে কর্মনীতি রচনা করেন, উহার যে যে স্থলে আমাদের সহযোগিতা করা সম্ভব, আমরা সেই সেই স্থলে আপনার সহিত সহযোগিতা করিব।” ঐ দিনই পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু পত্র যোগে সুভাষচন্দ্রকে জানান যে বর্ত্তমানে, বিশেষ করিয়া কংগ্রেসের সভাপতি নির্ব্বাচনের পর যে আবহাওয়ার সৃষ্টি হইয়াছে, তাহাতে তিনিও আর কংগ্রেস ওয়ার্কিং-কমিটি সদস্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করিতে পারেন না। ওয়ার্কিং কমিটির বারজন সদস্যের পদত্যাগের ফলে বর্ত্তমানে ওয়ার্কিং কমিটির অস্তিত্ব লোপ পাইয়াছে বলিয়াই পণ্ডিতজী মনে করেন, এবং এই পরিণতির ফলে ব্যক্তিগতভাবেও তিনি শ্রীযুক্ত বসুকে কোনরূপ সাহায্য করিতে পারিবেন না। ঐ পত্রের উপসংহারে পণ্ডিতজী লিখেন, “আমি পাকা সমাজতান্ত্রিক এবং গণতন্ত্রে আস্থাবান হইলেও গত ২০ বৎসর যাবৎ অনুসৃত মহাত্মা গান্ধীর অহিংস শান্তিপূর্ণ পন্থা সর্ব্বান্তঃকরণেই গ্রহণ করিয়াছি।” অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুও পদত্যাগ করিলেন।

 সুভাষচন্দ্র ও দক্ষিণপন্থী নেতৃবৃন্দের মধ্যে যে মতবিরোধ তাহা মূলতঃ সংগ্রামমূলক মনোভাব ও সংগ্রামবিমুখ মনোভাবের বিরোধ মাত্র। সুভাষচন্দ্র সংগ্রামশীল মনোভাবের পরিচয় দিয়াছেন এবং প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম ঘোষণা করিয়াছেন। সংগ্রামমূলক কর্মপন্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দ্বারাই তিনি কংগ্রেসের বামপক্ষের সমর্থন লাভ করিয়াছেন—সুতরাং দক্ষিণপন্থিগণ তাঁহার সহিত কিছুতেই সহযোগিতা রক্ষা করিয়া চলিতে পারেন না। কংগ্রেসের ঐক্য ও সংহতি রক্ষাকল্পে সুভাষচন্দ্র চেষ্টার কোন ত্রুটি করেন নাই, তৎসত্ত্বেও কংগ্রেসের মধ্যে ভেদ অনিবার্য্য হইয়া উঠিল। এদিকে ইউরোপের আকাশে তখন বিশ্বযুদ্ধের মেঘ পুঞ্জীভূত হইয়া উঠিতেছে—যে