পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

তদুত্তরে তিনি বলেন, “কংগ্রেস যাহাতে স্বাভাবিক পরিণতির পথে অগ্রসর হইতে পারে ও সহজভাবে বিকাশপ্রাপ্ত হইতে পারে তাহার জন্যই আমি কংগ্রেসের সহিত প্রত্যক্ষ যোগ ছিন্ন করিতে মনস্থ করিয়াছি। যে ভাবেই হউক, বর্ত্তমান সময়ে আমার উপস্থিতিতে কংগ্রেসের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশে বিঘ্ন উৎপন্ন হইতেছে! ইহা এখন একটি কৃত্রিম ও জবরদস্তিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হইয়াছে—যে কোন প্রতিষ্ঠান বা জাতির উন্নতির পথে এইরূপ অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ও অনিষ্টকর।” গান্ধীজীর এই ঘোষণা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও গান্ধীজীর অনুচরবর্গ যে তাঁহার সম্মতি ব্যতিরেকেই গান্ধীজীর উপর সমস্ত দায়িত্বভার অর্পণ করতে সাহসী হইলেন—ইহাই আশ্চর্য্য! আর যদি গান্ধীজীর সম্মতি প্রচ্ছন্নভাবে থাকিয়াই থাকে তাহা হইলে পূর্বোক্ত ঘোষণার সহিত পন্থ-প্রস্তাবের সামঞ্জস্য বিধান করা যায় কিরূপে?

 ওয়ার্কিং কমিটির বার জন সদস্য তাঁহাদের পদত্যাগ পত্রে রাষ্ট্রপতিকে লিখিয়াছিলেন “আমাদের মনে হয়, আপনার মনোমত কর্ম-পরিষদ গঠনে আপনাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়াই কর্ত্তব্য।” মহাত্মা গান্ধীও তাঁহার সমর্থকদের কংগ্রেসের বাহিরে থাকিয়া একনিষ্ঠভাবে দেশের সেবা করিয়া যাইতে পরামর্শ দিয়াছিলেন। কিন্তু পন্থ-প্রস্তাবের ফলে ত্রিপুরীতে গান্ধীবাদীদের যে স্বরূপ প্রকাশ পাইল তাহাতে সুভাষচন্দ্রের পুনর্নির্বাচন ব্যাপারটিকে তাঁহারা যে সহজভাবে গ্রহণ করিতে পারেন নাই তাহা কাহারও বুঝিতে বাকী রহিল না। সুভাষচন্দ্রের প্রতি তাঁহাদের বিদ্ধেষভাব এতই প্রবল হইয়া উঠিয়াছে যে তাঁহারা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য বৃহত্তর জাতীয় কল্যাণকে বিসর্জ্জন দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নাই। সুভাষচন্দ্র তাঁহার মনোনীত বামপন্থী কর্মীদের লইয়া অনায়াসে নিজ কর্মপরিষদ গঠন করিতে পারিতেন কিন্তু কংগ্রেসের মধ্যে কোনরূপ ভেদসৃষ্টি করা ও পন্থ-প্রস্তাবের অন্যথাচরণ করা তাঁহার অভিপ্রেত নয়