পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

পারে না। দারিদ্র্য, অনশন, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, অত্যাচার ও লাঞ্ছনা যে পরাধীন জাতির নিত্য সহচর দেশবাসী তাহা নিঃসন্দেহে বুঝিতে পারিল। তাহারা বুঝিল দাসত্বের কলঙ্ক মুছিয়া না ফেলা পর্য্যন্ত জাতির ভাগ্যে সুখ ভােগ ঘটিতে পারে না। এই সময় বাঙ্‌লার বুকে এক তেজস্বী পূরুষের আবির্ভাব হয়। ইনি যুগাবতার স্বামী বিবেকানন্দ। বিবেকানন্দ জাতিকে শিখাইলেন ত্যাগ ও সংগ্রামের সাধন মন্ত্র। শক্তি মন্ত্রের উপাসকের উদাত্ত কণ্ঠস্বর সারা ভারত প্রকম্পিত করিয়া ধ্বনিত হইল “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ, তােরা বীর হ’, বীর হ’, বল অভীঃ অভীঃ মাভৈঃ।” যে জাতি দাসত্ব শঙ্খলের ভার আপনার স্কন্ধে প্রতিনিয়ত অনুভব করিতেছে তাহার নিকট ত্যাগ ও শক্তির এই আহ্বান বিপুল জাগরণের সূত্রপাত করিল। দেশের যুবসম্প্রদায় মাতৃভূমির মুক্তির জন্য সর্ব্বস্ব পণ করিয়া বিদেশী শাসকের অত্যাচার ও ফাঁসি কাঠকে উপেক্ষা করিয়া মরণ খেলায় মাতিয়া উঠিল। স্বামীজীর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই ভারতের সর্ব্বপ্রথম রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হইল বঙ্গ-ব্যবচ্ছেদের প্রতিবাদে। স্বামীজীর শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত শত সহস্র যুবক এই আন্দোলনে যােগদান করিয়া মাতৃভূমির উদ্ধার কল্পে স্বাধীনতার সংগ্রামে সর্ব্বপ্রথম রক্তদান করিল।

 পরবর্ত্তী অসহযােগ আন্দোলনে সর্ব্বত্যাগী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের আহ্বানে বাঙ্‌লা মায়ের যে কয়জন সন্তান সাংসারিক সুখ-সম্ভোগ ও প্রতিপত্তির প্রলােভন ত্যাগ করিয়া তাঁহার নিকট দেশ সেবার দীক্ষা গ্রহণ করেন সুভাষচন্দ্র তাহাদের অন্যতম। যাঁহাদের সাধনা ও মনীষা বলে যুগে যুগে বাঙালীর জীবন-যাত্রা ও সংস্কৃতি অপরূপ স্বকীয়তা অর্জ্জন করিয়াছে তাঁহাদেরই সাধনার নিরবচ্ছিন্ন ঐতিহ্য সুভাষচন্দ্রের মানসজীবন সমৃদ্ধ করিয়াছে—বাঙালীর সংস্কৃতি ও সাধনার ধারক ও বাহক সেই সব কর্ম্মবীর মনীষীদের সাধনার বরিষ্ঠ উত্তরসাধকরূপে সুভাষচন্দ্র তাঁহার জীবনে কর্ম্মপ্রতিভা ও মননশক্তির সার্থক সমন্বয় সাধন করিয়াছেন।