পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

 উত্তমচাঁদ বর্ণিত সুভাষচন্দ্রের ভারত ত্যাগের বৃত্তান্ত পড়িয়া আমরা জানিতে পারি যে, রাশিয়া যাওয়াই তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল। উত্তমচাঁদ ও সুভাষচন্দ্রের মধ্যে এই বিষয়ে যে আলােচনা হয় তাহা নিম্নে উদ্ধৃত করিলাম:—

 একদিন কথা প্রসঙ্গে বােসবাবুকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তাঁহার মস্কো যাইবার আসল উদ্দেশ্য কী? তদুত্তরে তিনি বলিলেন—‘বর্ত্তমান সময়ে রাশিয়া ও জার্মানী পরস্পর অনাক্রমণ চুক্তিতে আবদ্ধ। জার্মানী বৃটেনের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত। রাশিয়াও বৃটেনের শত্রু। মস্কো যাইয়া ভারতের স্বাধীনতার জন্য প্রচারকার্য চালাইবার এখনই উপযুক্ত সময়।’

 আমি কহিলাম, রাশিয়ার সহিত জার্মানীর বর্ত্তমানে চুক্তি রহিয়াছে বটে কিন্তু উহাদের মধ্যে আদর্শগত মিল আদৌ নাই। বন্ধুত্বের আড়ালে এখনই যে উভয় দেশে যুদ্ধের আয়ােজন চলিতেছে না, সে কথাই বা কে বলিতে পারে? সেক্ষেত্রে রাশিয়ানরা কি আপনাকে ব্রিটীশের বিরুদ্ধে প্রচারকার্য্য চালাইতে দিবে? উত্তরে বােসবাবু বলিলেন, ‘হয়ত জার্মানী ও রাশিয়ার মধ্যে মিত্রতা দীর্ঘকাল স্থায়ী হইবে না; হয়ত তাহাদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিবে। ···জার্মানী ও রাশিয়ার মধ্যে ভিতরে ভিতরে একটা বৈরীভাব থাকিলেও ইংরাজরাও তাে কিছু রাশিয়ার বন্ধু নয়। কাজেই আমার নিশ্চিত বিশ্বাস, রাশিয়ানরা আমাকে ইংরাজদের বিরুদ্ধে প্রচারকার্য্য চালাইতে দিবে।’

 আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি কি মনে করেন, শুধু প্রচারকার্য্যের দ্বারাই ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জ্জন করিতে পারিবে? বােস বাবু বলিলেন, ‘আমার নিজের দৃঢ় বিশ্বাস যে, রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের দ্বারা ইংরাজদের তাড়াইয়া না দিলে তাহারা কখনই ভারতবর্ষ পরিত্যাগ করিয়া যাইবে না। তাহারা কখনই কোন দেশকে শান্তভাবে স্বাধীনতা দেয় নাই। আয়ারল্যাণ্ডের কথাই ভাবুন না কেন? মনে রাখিবেন