পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৩৩

 ইংলণ্ডে থাকাকালে আয়ারল্যাণ্ডের সিন্ ফিন্ আন্দোলন তাঁহার চিত্তে গভীর রেখাপাত করে। আয়ার্‌ল্যাণ্ডের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তখনকার সময়ে সিন্‌ফিনদল বামপন্থী ছিল; “পূর্ণ স্বাধীনতা” ছাড়া কিছুই গ্রহণ করিতে তাহারা স্বীকৃত হয় নাই। ক্ষুদ্র দল হইলেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রবল অন্দোলনের সৃষ্টি করিতে তাহারা সর্ববিধ কৌশল অবলম্বন করিয়াছিল। জগতের সমস্ত সাফল্যমণ্ডিত বিপ্লব-আন্দোলনের গতি ও প্রকৃতি অনুধাবন করিয়া সুভাষচন্দ্র রাজনীতিক্ষেত্রে কঠোর বাস্তববাদী হইয়া উঠেন। জগতের সার্থক বিপ্লব-আন্দোলন আলোচনায় দেখা যায় যে, সর্বক্ষেত্রেই মুষ্টিমেয় বামপন্থীদের সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ ও আপোষবিহীন সংগ্রাম-নিষ্ঠার বলেই আন্দোলন সফল হইয়াছে। তাই, সুভাষচন্দ্রকে বামপন্থীদলের আদর্শ নায়ক হিসাবেই আমরা দেখিতে পাই।

 ১৯০৫ সালের গৌরবময় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ সন্তান, দেশসেবার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত সুভাষচন্দ্র ১৯২১ সালে ইংলণ্ড হইতে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া রাজনৈতিক আন্দোলনে ঝাঁপাইয়া পড়িবার দুর্বার বাসনায় পূর্বাপর বিভিন্ন পর্য্যায় বুঝিয়া লইবার জন্য গান্ধীজির নিকট গমন করেন। এই প্রথম সাক্ষাৎকারেই ভারতের রাজনীতিতে দুই স্বতন্ত্র আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গির সংঘর্ষ প্রতিভাত হয়। ভারতের রাজনৈতিক সমস্যার “সত্য” “অহিংসা” “প্রেম”, “ন্যায়”, ইত্যাদি দার্শনিক আলোচনা ও সমস্যার উপর অতিরিক্ত মাত্রায় গান্ধীজি জোর দেওয়ায় সুভাষচন্দ্র মুশ্‌কিলে পড়েন। গান্ধীজি প্রবর্ত্তিত অহিংস সংগ্রাম পদ্ধতির উপযোগিতা সুভাষচন্দ্র নিঃসংশয়ে উপলব্ধি ও স্বীকার করেন। গান্ধীজির অহিংস নীতির উপর সুভাষচন্দ্রের সন্দেহ জন্মে নাই। কিন্তু, গান্ধীজির বিশিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি, নীতিশাস্ত্র ও রাজনীতির মিশ্রণ, এক কথায় রাষ্ট্রিক আন্দোলনে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শক্তির অত্যুগ্র আমদানী—ইহাতে সুভাষচন্দ্রের মনে বিশেষ খট্‌কা ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। গান্ধীজির সহিত প্রথম সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা