পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

বর্ণনা প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র বলেন—“আমার মনে হইল, গান্ধীজি যে পরিকল্পনা নির্ণয় করিয়াছেন, তাহার মধ্যে স্পষ্টতার শােচনীয় অভাব আছে—যে সংগ্রাম ভারতকে স্বাধীনতার বাঞ্ছিত লক্ষ্যে পৌঁছাইয়া দিবে, তাহার সম্বন্ধে গান্ধীজির নিজেরও সুস্পষ্ট ধারণা নাই।” পরবর্ত্তীকালে গান্ধীজির রাজনৈতিক মতবাদ বিশিষ্ট জীবনবাদে পরিণতি লাভ করিয়াছে, বাস্তববাদী সুভাষ ও আদর্শবাদী গান্ধীজির মতান্তরও অপনীত হয় নাই। শাসকের অত্যাচার, নির্য্যাতন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিশেষ ধরণের গণ-আন্দোলন হিসাবেই গান্ধীজি প্রথমতঃ নিস্ক্রিয় প্রতিরােধ (Passive Resistance) আন্দোলন প্রবর্ত্তন করেন—কিন্তু “এই নিস্ক্রিয় প্রতিরােধ” নীতিকেই তিনি এখন “অহিংসার ক্রীডে” (Creed of Non-violence) পরিণত করিয়াছেন। গণ-অন্দোলনের অভিনব কৌশল হিসাবে অহিংস নীতিতে কাহারও আপত্তি থাকিতে পারে না। সুভাষচন্দ্রও “সত্যাগ্রহ আন্দোলনের” সার্থকতা স্বীকার করিয়া লইয়াছেন। রাজনৈতিক কার্যক্রমে “খাদি”র বিশিষ্টস্থান আছে— বৈদেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক হিসাবে “খাদি” র মর্য্যাদা সর্বস্বীকৃত—জনগণের চিত্তে “চরখা” আত্মপ্রত্যয়, আত্মসম্মান, ও আত্মনির্ভর জাগাইয়া তুলিয়াছে—ইহাও স্বতঃস্পষ্ট। কিন্তু এই সব বস্তুকে রাজনৈতিক সমস্যার সহিত সম্পূর্ণভাবে মিশাইয়া ফেলা ও রাজনৈতিক দরকষাকষির বেলায় অত্যুদার সাধুতা প্রদর্শন—মহাত্মা গান্ধীর এই নীতি ও আচরণ আধুনিক মনের নিকট দুর্বোধ্য।

 বাস্তববাদী সুভাষচন্দ্র অহিংসাকে নীতি হিসাবেই গ্রহণ করিয়াছেন। বিচ্ছিন্ন হিংসআন্দোলন দ্বারা যে কোন সুফল লাভ হইবে না—ইহা তিনি উত্তমরূপেই বুঝিয়াছেন। কিন্তু তিনি ইহাও মনে করিতেন যে, শত্রুকে অপদস্থ করিবার ও বেকায়দায় ফেলিবার মত যথেষ্ট নীতিজ্ঞান ও দূরদৃষ্টি সেনাপতির থাকা চাই—আবার ইহার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের অনুকূলে