পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বত্রিশ

 আজাদ-হিন্দ ফৌজের আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গী—১৯৪৪ সালের প্রথমভাগে ভারতের দুর্ভেদ্য পূর্ব্বসীমান্ত অতিক্রম করিয়া যে নির্ভীক সেনাদল ভারতভূমিতে পদার্পণ করিয়াছিল, তাহাদের হস্তে পররাজ্যলোভী দস্যু আক্রমণকারীর উদ্যত অগ্নি-নালিক ছিল না, নৃশংস অত্যাচারের বিভীষিকা সৃষ্টি করিয়া তাহারা সমগ্র দেশকে বর্ব্বরতার লীলাভূমিতে পরিণত করিতে চাহে নাই, নিরপরাধ ও নিঃসহায় জনগণের রক্তে শ্যামলা বনভূমি রঞ্জিত করে নাই, তাহাদের দৃষ্টিতে হিংস্রতা ছিল না, আচরণে ক্রূরতার লেশমাত্র দৃষ্ট হয় নাই; তাহারা আসিয়াছিল স্বাধীনতার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকাহস্তে পরাধীন ভারতবাসীর মুক্তির বার্ত্তা বহন করিয়া। তাহাদের আবির্ভাবের ফলেই দুইশত বৎসরের পদদলিত ও শৃঙ্খলিত ভারতবাসীর বন্ধন-মুক্তি সমাসন্ন হইয়া উঠিয়াছে। কোহিমা ডিমাপুরে ভারতের মৃত্তিকায় আজাদ-হিন্দ্-ফৌজের যে দল আসিয়া স্বাধীনতার পতাকা প্রোথিত করে তাহাদের মূর্তি অপূর্ব্ব সংযত—হিংস্র পাশবশক্তির উগ্রতা, উচ্ছৃঙ্খলতা তাহাদের চরিত্রে কালিমালেপন করে নাই। বিপ্লববহ্নিতে পরিশুদ্ধ হইয়া, দেশাত্মবোধের মর্ম্মান্তিক বেদনায় তাহারা বিপুল চারিত্রশক্তি ও সংযম লাভ করিয়াছে। এই বিপ্লবযজ্ঞে সাগ্নিক পুরোহিত সুভাষচন্দ্র।

 মাতৃভূমির উদ্ধারসাধনকল্পে প্রবাসী দেশপ্রেমিকদের আত্মত্যাগ ও দুর্জ্জয় মুক্তি-প্রেরণায় গঠিত এইরূপ ফৌজের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ব্রহ্মদেশের বনাকীর্ণ অঞ্চলে আসামের গিরি-উপত্যকায়, আরাকানের পার্ব্বত্যভূমিতে ঘোর সংগ্রাম করিয়া এই মুক্তিসেনাদল যে বিস্ময়কর ইতিহাস রচনা করিয়াছে, প্রত্যেক ভারতবাসীর নিকট তাহা পরম গৌরবের বস্তু। বিলাস ও ঐশ্বর্য্যের মোহ কাটাইয়া, সংসারের