পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৬৯

ছিলেন তখনকার কথা বলিতে গিয়া মিঃ সামন্ত তাঁহার বিবৃতিতে লিখিয়াছেন—“একদিন নেতাজী আমাদের বলিলেন যদি তোমরা মনে করিয়া থাক আমি নিজের স্বার্থের জন্য স্বদেশ ছাড়িয়া আসিয়াছি তাহা হইলে তোমরা আমাকে ভুল বুঝিবে। যদি তোমরা মনে করিয়া থাক যে আমি কংগ্রেস এবং গান্ধীজীর সঙ্গে বিরোধিতা করিয়া বহির্জগতে আত্মপ্রতিষ্ঠা করিতে ও সুনাম অর্জন করিতে আসিয়াছি তাহা হইলেও তোমরা ভুল করিবে। আমি এখানে নিজের স্বার্থের জন্য পরিশ্রম ও কষ্টভোগ করিতে আসি নাই। আমি আসিয়াছি ভারতকে বৃটিশের প্রভুত্ব হইতে মুক্ত করিতে। যখন আমার এই প্রচেষ্টা সফল হইবে তখন আমি স্বাধীন ভারতকে সঙ্গে লইয়া ভারতে প্রত্যাবর্তন করিব এবং মহাত্মা গান্ধীর চরণে নিবেদন করিয়া বলিব ‘আপনার স্বাধীন ভারতের ভার আপনি স্বহস্তে গ্রহণ করুন।’”

 ভারতবর্ষে কংগ্রেসের প্রত্যেকটি কর্ম্মপন্থা পূর্ব এশিয়ার ভারবাসীর আন্দোলনকে প্রভাবিত করে। ১৯৪২ সালের ৯ই আগষ্ট কংগ্রেস যখন ‘ব্রিটিশ ভারত ত্যাগ কর’ দাবী উত্থাপন করিয়া ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ আহ্বানে দেশবাসীকে প্রস্তুত হইতে বলিল তখন পূর্ব এশিয়ার স্বাধীনতা লীগ উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হয়। আগষ্ট আন্দোলন যখন ভারতে বিদ্রোহানল প্রজ্জ্বলিত করিল তখন স্বাধীনতা সংঘ সেই আন্দেলনে সাহায্য করিবার জন্য আপ্রাণ পরিশ্রম করে। পূর্ব-এশিয়াবাসী জানিত যে, আগষ্ট প্রস্তাবে ফ্যাসিস্ত শক্তিদের সমর্থন করা হয় নাই। চীন ও রাশিয়ার গৌরবময় সংগ্রামে সহানুভূতি জানান হইয়াছে। সুতরাং তাহারা সর্বদাই সজাগ ছিল যাহাতে জাপানের প্রতি সহানুভূতিশীল হইয়া তাহারা কংগ্রেসের আদর্শকে লাঞ্ছিত না করে। সুভাষচন্দ্র পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করিবার পর এই আদর্শগত ঐক্য আরও বৃদ্ধি পায়। সুভাষচন্দ্র আজীবন কাল কংগ্রেসের সেবক।