পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৭৩

ভারতবর্ষ ত্যাগ করে তবে আমি এই মুহূর্তে আজাদ হিন্দ ফৌজ ভাঙ্গিয়া দিতে আপনাদিগকে অনুরোধ করিব। পূর্ব এশিয়ায় সুভাষচন্দ্র তাঁহার প্রতিটি বক্তৃতায় ঘোষণা করিতেন যে, তিনি কংগ্রেসের এবং ভারতবাসীর সেবক মাত্র।

 কংগ্রেসের অহিংস নীতির সহিত আজাদ হিন্দ বাহিনীর আপাতদৃষ্টিতে বিরোধিতা দেখা যায় সত্য কিন্তু এ কথা সর্বজনবিদিত যে কংগ্রেস ভারতবাসীর বর্ত্তমান নিরস্ত্র অবস্থা দেখিয়াই প্রথমে অহিংস নীতি গ্রহণ করে। ১৯২১ সালের আন্দোলনের পূর্বে নাগপুর কংগ্রেস অধিবেশনে গান্ধীজী ঘোষণা করেন, “আজ যদি ভারতের তরবারি থাকিত তবে সে তরবারি লইয়াই সংগ্রাম করিত।” ভারতবাসীর তরবারি নাই তাই অহিংস সংগ্রামের নীতি গৃহীত হয়। অধিকন্তু, কংগ্রেসের বহু প্রবীণ নেতাও অহিংস নীতিতে সম্পূর্ণ আস্থাবান থাকিতে পারেন নাই। কংগ্রেস কোন দল নহে, ইহা সর্বদলের সম্মিলিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান— সকল ভারতীয়ের এক মহাসম্মেলন। এখানে চিরকালই বহুমতবিশিষ্ট ব্যক্তি বা দল থাকিবে। সুতরাং, কংগ্রেসের ইতিহাসের দিক দিয়া বিবেচনা করিলে এবং পূর্ব এশিয়ার বিশেষ অবস্থার কথা স্মরণ করিলে এই বিরোধের তেমন গুরুত্ব নাই। একথা সর্বজনস্বীকৃত যে কংগ্রেসে ‘অহিংসা’ নীতি যুদ্ধকৌশল (technique) হিসাবেই গৃহীত হইয়াছে। ১৯৪২ সালের ৭ই-৮ই আগষ্ট A. I. C. C.’র সভায় Quit India প্রস্তাব উত্থাপন করিয়া গান্ধীজী বলিয়াছিলেন, “I ask you to accept it (nonviolence) as a matter of policy.”

 আজাদ-হিন্দ-আন্দোলনের উদ্দেশ্য একনায়কত্ব স্থাপন করা ছিল না। সুভাষচন্দ্র পূর্ব এশিয়াবাসীর হৃদয়ে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়াছিলেন। তাহারা তাঁহাকে দেবতাজ্ঞানে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করিত। তাঁহার নিকট শপথ গ্রহণ করিয়াছে বলিয়া কত সৈনিক নিশ্চিত পরাজয়ের মুখেও