পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৭৫

অক্ষুন্ন রাখিয়াছিলেন। সুভাষচন্দ্র অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ, নিষ্ঠা, অবিচলিত দেশপ্রেম ও মনোহর ব্যক্তিত্ববলে সকলের শ্রদ্ধাভাজন হইয়াছিলেন; কিন্তু কোনদিন তিনি গনতান্ত্রিকনীতির অবমাননা করেন নাই কিংবা একচ্ছত্র শাসন প্রবর্ত্তনের চেষ্টা করেন নাই। নেতাজীর আদর্শ—All Power to the Indian masses—

 আজাদ হিন্দ ফৌজ দেশবাসীকে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দিয়াছে। ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট নিজেদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্রথম সামরিক বিচার সভায় আজাদ হিন্দ আন্দোলনের এক অপূর্ব বাণীর প্রচার করিয়া দেন। তাহারা তিনজন অফিসারকে বিচারের জন্য আনয়ন করেন, মেজর জেনারেল শাহ্‌নওয়াজ, কর্ণেল সেহগল ও কর্ণেল ধীলন—একজন মুসলমান, একজন হিন্দু ও একজন শিখ। তাঁহাদের একত্র উপস্থিতির ভিতর দিয়াই আজাদ হিন্দের অন্যতম আদর্শ প্রকাশিত হইয়াছিল। এই আদর্শ সর্বভারতের ঐক্য, সর্বজাতির ঐক্য। আজাদ হিন্দ ফৌজ সকল ধর্মাবলম্বী এবং সকল প্রদেশের অধিবাসী লইয়া গঠিত হইয়াছে। যে বৃটিশগভর্ণমেণ্ট চিরকাল প্রচার করিয়া আসিতেছে যে তাহারা চলিয়া গেলে ভারতবর্ষ বিভিন্ন ধর্ম্ম ও জাতির আত্ম-কলহেই ধ্বংস হইবে, তাহাদের সম্মুখেই প্রমাণিত হইল যে রণক্ষেত্রে এবং জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতি-ধর্ম্ম নির্ব্বিশেষে ভারতবাসীর ঐক্য সম্ভবপর। তাহারা প্রমাণ করিয়াছে যে বৃটিশ গভর্ণমেণ্টের উপস্থিতিই ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক ভেদ-বিভেদ ও কলহের মূলে। আজাদবাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন বাঙ্গালী—এই বাহিনীতে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত হইতে আসাম পর্য্যন্ত এবং হিমালয় হইতে কন্যাকুমারিকা পর্য্যন্ত সকল স্থানের ভারতবাসীই ছিল। যে গুর্খারা ভারতে বৃটিশ রাজত্বের শ্রেষ্ঠ স্তম্ভ বলিয়া ঘৃণিত হয় তাহারাও দলে দলে আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দেয়। সকল ধর্ম্ম ও জাতির সমন্বয়ে গঠিত এই ফৌজে কোনদিন গোলযোগ বা বিভেদের সৃষ্টি