পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৬
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

হয় নাই। বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম্ম বা জাতির উপস্থিতিতে ফৌজের আভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা নষ্ট হয় নাই। বৃটিশ ভারতীয় বাহিনীতেও যে সকল গোলযোগের কথা শুনা যায় এখানে তাহার কিছুই শুনা যায় নাই। ইহা যে কতবড় কৃতিত্বের কথা তাহা ভাবিলে অবাক হইতে হয়। বৃটিশ শাসনের কৃপায় এবং বহু যুগের দাসত্বের ফলে আমাদের দেশে বহু অন্ধসংস্কার শিকড় গাড়িয়াছে। বহু শিক্ষিত ও উন্নত সম্প্রদায়ও এই সকল কুসংস্কার হইতে মুক্ত হইতে পারেন নাই। সাম্প্রদায়িকতা, প্রাদেশিকতা এখনও দেশের মধ্যে প্রবল। এই সকল বিভিন্ন মতাবলম্বীদের এক ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করা যে কতবড় সাংগঠনিক কৃতিত্বের পরিচয় তা ভাবিলে অবাক হতে হয়। এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য তাহারা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। শিক্ষা, মিটিং ও বক্তৃতাদ্বারা ফৌজের সৈনিকদের বোঝান হইত। এভিন্ন ফৌজের ভিতর সহ-ভোজন প্রথা প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রান্নার ব্যবস্থা না করিয়া সকলেরই খাদ্য একস্থানে প্রস্তুত করা হইত। সকলে একত্র বসিয়া আহার করিত। কেবল আমিষ ও নিরামিষাশীর পার্থক্য বজায় রাখা হইত। এইভাবে ফৌজের ভিতর হইতে ঘৃণা, ছুৎমার্গ প্রভৃতি কুসংস্কার অবলুপ্ত হইয়া যায়।

 ফৌজের ভিতর শিক্ষা এত উন্নত ধরণের ছিল যে, সেখানে কোন প্রকার ইতরজনোচিত আলোচনা হইত না। অথবা মদ্যপায়ী দেখিতে পাওয়া যাইত না। সকলেই এক মহান আদর্শে আত্মবলিদান করিয়াছিলেন।

 শ্রীমতী ম’ লিখিত বিদ্রোহিণী তনয়ার ডায়েরীতে নিম্নলিখিত মন্তব্যটি রহিয়াছে—

 “স্বাধীনতালাভের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইলে সাম্প্রদায়িকতার সমাধি রচিত হইবে। ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলন ও খিলাফৎ আন্দোলনের সময় হিন্দুরা কি মুসলমানদের মসজিদে ও মুসলমানগণ কি