সুলভ রাজনীতিজ্ঞান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নূতন পথ প্রদর্শন করিয়াছে—তাঁহার মহনীয় আত্মত্যাগ মুক্তি সংগ্রামের সৈনিকদের সম্মুখে এক অত্যুজ্জ্বল আদর্শ স্থাপন করিয়াছে। সুভাষচন্দ্রের আপাতব্যর্থতা ও পরাজয় বিদ্যুদ্গর্ভ মেঘের ন্যায় অন্তর্গূঢ় সাফল্যের আলােকচ্ছটায় উদ্ভাসিত হইয়াছে।
সুভাষচন্দ্রের কর্ম ও সাধনা দেশবাসীর আত্মচেতনাকে উদ্বুদ্ধ করিয়া—আত্মশক্তিকে জাগ্রত করিয়া এক বিরাট ও অভূতপূর্ব্ব জাতীয় জাগরণ ও দেশপ্রেমের উন্মাদনা সৃষ্টি করিয়াছে। জাতীয় মুক্তি-ব্রতে দীক্ষিত স্বাধীনতার সৈনিকেরা নেতাজীর জীবনবেদ হইতে নিষ্কাম স্বার্থ-কলুষহীন দেশসেবার পাঠ শিখিয়া লইবে—শিখিয়া লইবে অকপট ক্ষুরধার স্পষ্টভাষণ, অনির্বাণ আপােষহীন সংগ্রামশীলতা, শৃঙ্খলা ও সংযমসাধনা, সংগঠননৈপুণ্য ও বিপ্লবমূলক কর্মতৎপরতা গণ-সংযােগ-ও-সংগঠন-মূলক শৃঙ্খলানুগ কর্মানুরাগ। কর্মযােগী নেতাজীর জীবনাদর্শ আমাদের মুক্তিসাধনায় মহাজাতি-সদন গঠনের কাজে উৎসাহ দিবে—জীবন চর্চ্চায় ও চরিত্র গঠনে শক্তি ও প্রেরণা যােগাইবে। আসমুদ্রহিমাচল ভারতের কোটি কোটি নর-নারী আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা আজ সুভাষচন্দ্রের নাম জপ করিতেছে। তাহাদের অন্তরের রাজসিংহাসনে সুভাষচন্দ্রের স্থান নির্দ্দিষ্ট হইয়া গেছে—কালের অমােঘ শাসন তাঁহাকে টলাইতে পারিবে না
“হে রাজতপস্বী বীর, তােমার সে উদার ভাবনা
বিধির ভাণ্ডারে
সঞ্চিত হইয়া গেছে, কাল কভু তার এক কণা
পারে হরিবারে?
তােমার সে প্রাণােৎসর্গ, স্বদেশলক্ষ্মীর পূজাঘরে
সে সত্যসাধন,
কে জানিত হয়ে গেছে চিরযুগযুগান্তর-তরে
ভারতের ধন।”