পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮২
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

 সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করিয়া ও ভারতের বাহিরে জাতির মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনা করিয়া কংগ্রেস ও জনসাধারণের মধ্যে বিপুল শক্তি সঞ্চার করিয়া দিয়াছেন। খণ্ড-ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ভারতকে এক অখণ্ড স্বাধীন রাষ্ট্রের বন্ধনে বাঁধিয়া দিতে চাহিয়াছিলেন মহাবিপ্লবী নেতাজী। এখানে ন্যায়-অন্যায়, হিংসা-অহিংসার প্রশ্ন তুলিলে আমাদের বিচার-বুদ্ধিকে অযথা ভারাক্রান্ত, কুয়াসাচ্ছন্ন ও কার্পন্যদুষ্ট করা হইবে। এই প্রশ্ন তুলিলে ভারতবর্ষের মহামানব রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, চন্দ্রগুপ্ত, বিক্রমাদিত্য, আকবর, শিবাজী প্রমুখ রাষ্ট্র নায়কদের কীর্ত্তিও ম্লান হইয়া যাইবে। জীবনের ব্যাপক বিস্তৃত পরিধিতে পূর্ণাবয়ব মনুষ্যত্ব সাধনার ভিত্তিতে মানবসেবা, মানবমুক্তি ও মাতৃভূমির মুক্তিসাধনায় চরম আত্মদানের মূল্য স্বীকার করিলে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের স্থান গ্রীকবীর লিওনিডাস, ইটালীর গ্যারিবল্ডী—ম্যাজিনি, ওয়াশিংটন, লেনিন, সান্-ইয়াৎ-সেন্, মাইকেল কলিন্স, ডি, ভ্যালেরা, কামাল আতাতুর্ক, জগলুল পাশা প্রমুখ প্রখ্যাতনামা আত্মত্যাগী রাষ্ট্রবীরদের পার্শ্বে সগৌরবে চিরকাল প্রতিষ্ঠিত থাকিবে।

 ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দেশবন্ধুর সম্বন্ধে তাঁহার একটি রচনায় লিখিয়াছিলেন, “পারাধীন দেশের সব চেয়ে বড় অভিশাপ এই যে, মুক্তিসংগ্রামে বিদেশীদের অপেক্ষা দেশের লোকদের সঙ্গেই মানুষকে লড়াই করিতে হয় বেশী।” এই উক্তি সুভাষচন্দ্রের সম্বন্ধেই সমধিক প্রযোজ্য। ভারতবর্ষের অভ্যন্তরে সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবন কংগ্রেসী উপরওয়ালাদের “সারমেয় রাজনীতি”র বিরুদ্ধে প্রবল বিদ্রোহ ও আপোষহীন সংগ্রামের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। কংগ্রেস হাইকম্যাণ্ডের সহিত মতবিরোধ নিদারুণ মর্মপীড়াদায়ক হইলেও সুভাষচন্দ্রের অসমান্য় চারিত্রশক্তি ক্ষমতালোলুপ কংগ্রেসনায়কদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কাছে কদাচ পরাজয় স্বীকার করে নাই। কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একক