পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

যাহারা দেখিয়াছে তাহাদের মনে স্বতঃই এই প্রশ্নের উদয় হইয়াছে— সুভাষচন্দ্রের এই অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা ও দেবদুর্লভ সম্মানের মূলে কোন ঐন্দ্রজালিক শক্তি কাজ করিতেছে? কোন্ গুণে সুভাষচন্দ্র ভারত ও ভারতের বাহিরে কোটি কোটি মানবের মন হরণ করিয়া লইয়াছেন? কোন্ সম্মোহন মন্ত্রে মুগ্ধ হইয়া ধনী তাহার যথাসর্বস্ব সমর্পণ করিয়া পথের ভিক্ষুক সাজিয়াছে, মাতা প্রাণাধিক পুত্রকে স্বেচ্ছায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলিয়া দিয়াছে, স্ত্রী তাহার প্রিয়তমা স্বামীকে রণসাজে সজ্জিত করিয়া মরণ-মহোৎসবে বিসর্জ্জন দিয়াছে—পুরুষ তাহার সমস্ত জীবনের সঞ্চয় দান করিয়াছে, নারী সর্বাঙ্গের অলংকার খুলিয়া দিয়া নিরাভরণা সাজিয়াছে? কোন্ যাদুমন্ত্রবলে নেতাজী অগণিত নর-নারীর হৃদয় জয় করিয়া লইয়াছেন? ভারতের বাহিরে নেতাজীর যে দেবোপম চরিত্র, হৃদয়মাধুর্য্য, বীর্য্য ও প্রেমের অনবদ্য সমন্বয়, অনমনীয় ব্যক্তিত্ব অসংখ্য মানবের হৃদয় আকর্ষণ করিয়াছিল, যে অতুলনীয় সংগঠন প্রতিভা, উদ্ভাবনীশক্তি ও সমরনৈপুণ্য লোকবিশ্রুত আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্ট ও ফৌজের প্রতিষ্ঠা করিয়া বিশ্বের বিস্ময় উৎপাদন করিয়াছে—জগতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করিয়াছে তাহার কথঞ্চিৎ পরিচয় প্রদান করাও আমাদের অনভ্যস্ত ও অপটু লেখনীর অসাধ্য।

 ১৯৪৩ সালের ২রা জুলাই নেতাজী সিঙ্গাপুরে পৌঁছেন। ঐ দিনের শ্রীমতী ম’ লিখিত “বিদ্রোহিণী তনয়ার ডায়েরী”তে নিম্নোক্ত বিররণটি রহিয়াছে:—

 “সুভাষবাবু আজি আসিলেন। স্ত্রী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকলেই তাঁহাকে স্বাগত জানাইতে ছুটিল। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও প্রশংসার সে এক শ্বাসরোধ-কারী দৃশ্য! ভারতীয়, মালয়বাসী, চীনা ও জাপানীদের এক বিরাট জমসমুদ্র সেই মহাবিপ্লবীকে একবার চোখে দেখিবার জন্য আকুল আগ্রহে হড়াহুড়ি করিয়া ছুটিল। অপেক্ষমান জনতার সে কী গভীর উৎকণ্ঠা!