পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৮৭

যে সময়ে বাহির হইয়া আসিতেছিলেন ঠিক সে সময়েই আমিও ভিতরে ঢুকিতেছিলাম। তাড়াতাড়ি আমি সৈনিকের ভঙ্গিতে স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া ‘জয় হিন্দ’ বলিয়া সামরিক কায়দায় অভিবাদন করিলাম·····আমি তাঁহাকে বলিলাম, ‘দিল্লী রেডিও আপনাকে স্বপ্নবিলাসী বলিয়া প্রচার করিয়াছে’।

 নেতাজী একমিনিটকাল চুপ করিয়া রহিলেন। পরে তিনি উত্তর করিলেন। কথাগুলি অত্যন্ত ধীরভাবে বলিলেন—ক্রোধের ভাব একটুও প্রকাশ পাহল না। মনে হইতেছিল যেন প্রত্যেকটি কথা তিনি অন্তরের গভীর অন্তস্তল হইতে উচ্চারণ করিতেছেন। তিনি কহিলেন, ওরা আমাকে স্বপ্নবিলাসী বলে। আমি স্বীকার করি যে আমি স্বপ্নবিলাসী, সমস্ত জীবনই আমি স্বপ্ন দেখিয়াছি। ছেলেবেলা হইতেই আমি স্বপ্নবিলাসী, কত স্বপ্নই না দেখিতাম। কিন্তু আমার সকল স্বপ্নের সেরা স্বপ্ন আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় স্বপ্ন—যে স্বপ্ন আমি দেখিতে ভালবাসি তাহা হইতেছে ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্ন। ওরা মনে করে স্বপ্ন দেখাটা বুঝি একটা মস্ত দোষ। আমি কিন্তু ইহাতে গর্ব অনুভব করি। ওদের কাছে আমার স্বপ্ন ভাল লাগে না—কিন্তু সে ত নতুন কথা কিছু নয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার স্বপ্ন যদি না দেখিতাম তবে ত দাসত্বের শৃঙ্খলকেই শাশ্বত বলিয়া মানিয়া লইতাম। আসল প্রশ্ন হইতেছে, আমার স্বপ্ন সফল হইবে কি না। আমি দেখিতেছি দিনে দিনে আমার স্বপ্ন বাস্তবে বিকশিত হইয়া উঠিতেছে। এই যে ভারতের জন্য মুক্তি ফৌজ গঠিত হইল এ আমার একটি স্বপ্নের বাস্তবরূপ। না, তাহারা যে আমাকে স্বপ্ন বিলাসী বলে ইহাতে আমি কিছুই মনে করি না। আবহমান কাল হইতে স্বপ্ন বিলাসীদের স্বপ্নের উপরেই বিশ্বের প্রগতি নির্ভর করিয়া আছে। সে স্বপ্ন অপরকে শোষণ করিবার স্বপ্ন নয়, সাম্রাজ্যবিস্তারের স্বপ্ন নয়, অন্যায়-অবিচারকে চিরস্থায়ী করিবার স্বপ্ন নয়—সে স্বপ্ন প্রগতির স্বপ্ন, বৃহত্তম