পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৯১

 ১৯৪৪ সালের ২১ শে অক্টোবর নেতাজী মিংলাডনে প্রথম পদাতিক বাহিনীর সম্মুখে বক্তৃতা করিতেছিলেন। বক্তৃতা শেষ হইয়া আসিয়াছে ঠিক এমন সময় জাপ জঙ্গী বিমানকে মাথার উপর উড়িতে দেখা গেল। একটু পরেই বিমান আক্রমনের সঙ্কেতধ্বনি হইল। সংগে সংগে শত্রপক্ষেরও কতকগুলি বােমা ও জঙ্গীবিমান আকাশে দেখা দিল। বিমান ঘাঁটি হইতে বিমান বিধ্বংসী কামানগুলি প্রচণ্ডভাবে গােলাবর্ষণ সুরু করিল। বিমানে বিমানে আকাশ ছাইয়া ফেলিল। নেতাজী তখন সৈন্যদলের অভিবাদন গ্রহণ করিতেছিলেন। তাঁহাকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাইবার জন্য সকলেই অনেক পীড়াপীড়ি করিল। নেতাজী স্নিগ্ধ হাসি হাসিয়া সৈন্যদলের দিকে অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া শুধু বলিলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রামের এই তিন হাজার সেনা যদি নির্ভীকভাবে দাঁড়াইয়া থাকিতে পারে তবে আমিই বা না পারিব কেন?”

 নেতাজী নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সমস্তই বিসর্জ্জন দিয়াছিলেন। দিবারাত্রি সামান্য সৈনিকের ন্যায় অবিরত অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়া যাইতেন। দিন রাত্রির মধ্যে দুই ঘণ্টা মাত্র নিদ্রা যাইতেন। হিন্দু, মুসলমান, মারাঠা, শিখ, খৃষ্টান সকলের সহিত একস্থানে বসিয়া আহার করিতেন। সকলে যে খাদ্য গ্রহণ করিত তিনিও তাহাই গ্রহণ করিতেন। সামরিক পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া আজাদ হিন্দ গভর্ণমেণ্টের সদস্যদের সংগে পিস্তল ও তরবারি লইয়া যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইতেন ও সৈন্যদিগকে উৎসাহ প্রদান করিতেন। দিনের পর দিন তাহাদের সংগে থাকিয়া সমান দুঃখকষ্ট সহ্য করিতেন। রণক্ষেত্রে আসিবার সময় তিনি সাধারণ সৈনিকের মত মাত্র দশ দিনের খাদ্য-সামগ্রী পৃষ্ঠে বহিয়া আনিতেন।

 স্বদেশে সুভাষচন্দ্র সাম্রাজ্যবাদা পেষণযন্ত্রে সতত নিষ্পিষ্ট হইয়াছিলেন—কারাগৃহের কঠোর শাসনে দুঃখভােগ ও কৃচ্ছসাধনের অসাধারণ ক্ষমতা অর্জ্জন করিয়াছিলেন; তাই, পূর্ব এশিয়ায় মুক্তি-সংগ্রামের সর্বাধি-