পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৯৩

স্বদেশপ্রেম অতুলনীয়। এ মালা তোমারই। তোমার ন্যায় দেশপ্রেমিকই এই গৌরব মুকুটটির যোগ্য অধিকারী।” এ সব কথা কিছুই যুবকের কানে গেল না। সে তখন পরম তৃপ্তি ও শ্রদ্ধার সহিত নেতাজীর মালটি বুকে চাপিয়া ধরিয়াছে। কম্পিতকণ্ঠে সে বলিল: “নেতাজী, আজ আমি জাগতিক সম্পদের মোহপাশ কাটাইয়াছি। আজ হইতে আমি ফৌজের সভ্য হইতে চাই। আমার দেশের স্বাধীনতার বেদীমূলে আমি জীবন উৎসর্গ করিলাম। আপনি আমাকে গ্রহণ করুন, নেতাজী।”

 নেতাজীকে যে তাহারা কতখানি গৌরবের আসনে বসাইয়াছিল এই ঘটনা হইতে তাহার কিঞ্চিৎ পরিচয় পাওয়া যাইবে। নেতাজীর কণ্ঠের মাল্যটি লাভ করা তাহারা মনুষ্যজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিল।

 ১৯৪৪ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর আজাদ হিন্দ সৈন্যগণ কতৃক যতীনদাসের স্মৃতিদিবস ও শহীদ দিবস প্রতিপালিত হয়। রেঙ্গুনের জুবিলী হলে এক মহতী জনসভায় লক্ষ লক্ষ নর-নারী সমবেত হইয়াছিল। সুভাষচন্দ্র আবেগময়ী ভাষায় এক ওজস্বিনী বক্তৃতা করেন। সুভাষচন্দ্র বলিয়াছিলেন—“আমাদের বন্দিনী জননী জন্মভূমি আজ স্বাধীনতালাভের জন্য অধীর হইয়া উঠিয়াছেন। মুক্তি না পাইলে তিনি আর বাঁচিবেন না। কিন্তু স্বাধীনতার বেদীমূলে আত্মত্যাগের প্রয়োজন। মুক্তির জন্য স্বেচ্ছায় তোমাদের সকল বৈভব, সমস্ত শক্তি—যাহা কিছু তোমরা মূল্যবান মনে কর—সকলই ত্যাগ করিতে হইবে। অতীতের বিপ্লবীদের ন্যায় তোমাদের সকল আরাম, সকল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সকল সম্ভোগ, সকল সম্পদ বলি দিতে হইবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে তোমরা তোমাদের পুত্রদের সৈনিক করিয়া পাঠাইয়াছ। কিন্তু মুক্তি-দেবী তাহাতেও তুষ্টা হন নাই। তাঁহার তুষ্টির গোপন রহস্য আমি তোমদের কাছে উদ্ঘাটন করিব। আজ তিনি ফৌজের জন্য কেবল