পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০০
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

কাজেই আমাদের কর্মক্রম হইতেছে আমাদের রক্ত দান করা। এ যুদ্ধে আমাদের বীরের রক্তস্রোতে অতীতের কাপুরুষতা ও অক্ষমতার অপরাধ ক্ষালন করিয়া লইতে হইবে। বীর শহীদগণের রক্তই স্বাধীনতার একমাত্র মূল্য। আমাদের সাহসী সৈনিকের রক্ত দান—অপরিমেয় বীর্য্য ও সাহস ভারতীয় জনগণের উপর ব্রিটিশের অত্যাচার ও শোষণের প্রতিশােধ লইবে।’

 সকল দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিকেরাই রক্তমূল্য দিয়া স্বাধীনতা কিনিয়াছে। নেতাজীর আশ্বাসবাণী ও আশীর্ব্বাদ আমাদের জন্য রহিয়াছে—“অন্ধকারে ও রৌদ্রালােকে (সুদিনে ও দুর্দ্দিনে), দুঃখে এবং সুখে, চরম দুর্দ্দশায় ও বিজয়ের আনন্দে আমি তােমাদের সঙ্গেই থাকিব। আপাতত তােমাদিগকে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যন্ত্রণা, সুদীর্ঘপথ ও মৃত্যু ছাড়া আমার কিছুই দিবার নাই। আমাদের মধ্যে কে বাঁচিয়া থাকিয়া ভারতবর্ষকে স্বাধীন দেখিবে, তাহার বিচার আজ নয়। এইটুকু আশ্বাসই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হইবে এবং ভারতবর্ষকে স্বাধীন করিবার জন্য আমরা সর্বস্ব সমর্পণ করিব।”

 নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হইয়াছে। এতাবৎ কেহই এই মৃত্যুসংবাদে আস্থা স্থাপন করে নাই। মহাত্মা গান্ধী হইতে আরম্ভ করিয়া কোন নেতাই সুভাষচন্দ্রের মৃত্যু সম্পর্কে নিঃসংশয় হন নাই। তাঁহার মৃত্যুর সপক্ষে ও বিপক্ষে প্রচারিত সংবাদ, নানারূপ জল্পনা-কল্পনা ও জনরবগুলি এই মৃত্যুসংবাদকে দুর্ভেদ্য রহস্যজালে আবৃত করিয়াছে। সমগ্র ভারতবাসীর সহিত আমরা নিরন্তর এই কামনা করিতেছি, নেতাজী পুনরায় আমাদের মধ্যে আবির্ভূত হইয়া আমাদের সকল সংশয় ছিন্ন করিবেন; উপযুক্ত মুহূর্ত্তে আত্মপ্রকাশ করিয়া নেতাজী ভারতবর্ষকে তাহার অভীষ্ট সিদ্ধির পথে পরিচালিত করিবেন। ভারতমাতার বন্ধনশৃঙ্খল চূর্ণ করিয়া তিনি তাঁহার আজীবনের স্বপ্ন সফল করিবেন। ভারতবর্ষ স্বাধীন হইবে।