পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

করিয়া সুভাষচন্দ্র নিজে শাস্তি হইতে অব্যাহতি পাইতে চাহিলেন না। অনুগত সঙ্গীদিগকে বিপদে ফেলিয়া নিজের পরিত্রাণলাভের এই হীন প্রস্তাবে তাঁহার বীর-হৃদয় বিদ্রোহী হইয়া উঠিল। তিনি স্বেচ্ছায়ই শাস্তি বরণ করিয়া লইলেন। এই ঘটনায় সুভাষ-চরিত্রের দৃঢ়তা, সহপাঠীদের প্রতি নিবিড় প্রীতি ও সহমর্মিতার পরিচয় পাওয়া যায় এবং নির্ভরযোগ্য নেতাহিসাবেও তাঁহার যোগ্যতা প্রমাণিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বিতাড়িত হইয়াও সুভাষচন্দ্র তাঁহার ভবিষ্যৎ জীবনের বিপুল সম্ভাবনা ও প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র হতাশ হন নাই; বরং তাঁহার উদ্যম ও চেষ্টা আরও বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনার কিছুকাল পূর্ব্বের একখানা চিঠিতে তিনি লিখেন, “উদ্যমশীল ও বুদ্ধিমান ব্যক্তির প্রতিষ্ঠা অর্জ্জনের পথ পৃথিবীতে চিরদিন উন্মুক্তই থাকে। যদি আমি ‘রাসটিকেটেড’, হই তবে তাহার জন্য আমার কিছুমাত্র চিন্তা নাই—আমি ইহার জন্য মোটেই দুঃখিত হইব না।” উক্ত পত্রে তিনি ইহাও উল্লেখ করেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ত্তৃপক্ষ যদি তাঁহাকে বহিষ্কৃত করিয়া দেয় তাহা হইলে তিনি আমেরিকা গিয়া অধ্যাপক Munsterbergএর নিকট Experimental Psychology অধ্যয়ন করিবেন।

 ‘ওটেন’ সংক্রান্ত ব্যাপারে সুভাষচন্দ্রের জীবনে এক আমূল পরিবর্ত্তন হয়। তিনি জাত্যাভিমানী শাসকশ্রেণীর অসঙ্গত ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিবার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালে মধ্যপ্রদেশ ও বেরার ছাত্র সম্মেলনের সভাপতিরূপে সুভাষচন্দ্র যে অভিভাষণ প্রদান করেন তাহাতে ছাত্রজীবনের উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন, “ছাত্রজীবনের সচ্চরিত্রতার দিক হইতে বিচার করিলে, আমার নিজের ছাত্রজীবন নিষ্কলঙ্ক ছিল না। এখনও আমার সেদিনের কথা স্পষ্টই মনে হইতেছে, যেদিন প্রিন্সিপ্যাল সাহেব আমাকে ডাকাইয়া নিয়া আমার উপর দণ্ডাদেশ জারি করিয়াছিলেন—কলেজ হইতে আমাকে সস্‌পেণ্ড